আপনার ভাষা নির্বাচন করুন
মাড়োয়ারের অন্তর্গত রাজস্থানের আরেক মরু শহর বিকানীর, যেখানে আছে এক অসাধারণ কেল্লা – জুনাগড় ফোর্ট, যে শহরে ঘুরে বেড়ায় উটের গাড়ি। রাজপুত রাও বিকাজী ১৫ শতকে থর মরুভূমির মাঝে এই শহর প্রতিষ্ঠা করেন।
‘চলুন বেরিয়ে পড়া যাক’। সকাল বেলা যোধপুরের সার্কিট হাউজে পোঁছে ফেলুদার কথা শুনে জটায়ুর প্রশ্ন ‘কেল্লা যাওয়া হচ্ছে?’ উত্তরে ফেলুদার জবাব ‘যোধপুর নয়, বিকানীর।‘
‘বিকানীর? আরে সে তো…’
‘১৫০ মাইল রাস্তা, সঙ্গে লাঞ্চ আছে’।
একটি গাড়িতে মুকুলকে নিয়ে ফেলুদা, তোপসে ও নকল হাজরা, আরেকটি গাড়িতে মন্দার বোসের সাথে জটায়ু। মরুভূমির মধ্যে দিয়ে ছুটল গাড়ি। পথে ময়ুরের দর্শন। জটায়ুর সাধের নেপালি কুকরি মন্দার বোসের হস্তগত হল। এভাবেই সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’র দৌলতে বাঙালি দর্শকের সামনে উন্মোচিত হল জয়সলমীরের মতই আরেক মরু শহর বিকানীর ও তার কেল্লা।
রাজস্থানের অন্য শহরগুলোর মতই বিকানীরেও আছে কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, স্থাপত্য ভাস্কর্য্য আর আছে মরুভূমি। দিল্লিতে থাকাকালীন একবার বেরিয়ে পড়লাম সেই বিকানীরের উদ্দেশে। দিল্লি সরাই রোহিলা স্টেশন থেকে সকালের ট্রেন ধরে রওনা হওয়া। আগে মিটার গেজে বা ঘুর পথে রেল যাত্রায় বিকানীর যেতে বেশ সময় লাগলেও, কয়েক বছর হল দিল্লি থেকে বিকানীর সরাসরি ৮ ঘন্টায় পৌঁছে যাওয়া যায়। যাত্রাপথে পড়ে রাজস্থানের শেখাবতী অঞ্চল। মহেন্দ্রগড়, লোহারু, চুরু ইত্যাদি স্টেশন পেরিয়ে ট্রেন পৌঁছল রতনগড় বলে ছোট্ট একটা স্টেশনে। আধা মরুভূমির মধ্যে কি সুন্দর ছবির মত একটা স্টেশন ঘর। ফাঁকা প্লাটফর্মে দু চার জন পাগড়ি পরা রাজস্থানী মানুষ। এরপর ট্রেন ঢুকল মরুভূমিতে। দুধারে বালিয়াড়ি, কাঁটাঝোপ ও মাঝে মাঝে উটের দলের দর্শন। মরুভুমির মধ্যে দিয়ে ট্রেনযাত্রা আমাদের শহুরে বাঙালিদের কাছে বরাবর বেশ রোমাঞ্চকর। দুপুরের পর পোঁছলাম বিকানীরে। স্টেশন থেকে অটো নিয়ে যখন হোটেলের দিকে এগোচ্ছি, চোখে পড়ল জুনাগড় ফোর্ট। কেল্লার সামনে দিয়েই রাস্তা। যেমন জয়পুর গোলাপী শহর, যোধপুর নীল শহর, জয়সলমীর সোনালী শহর, তেমনই বিকানীরের স্থাপত্যের নির্মাণ লাল বেলে পাথরে।
ইতিহাসের এক ঝলকঃ যোধপুরের মহারাজা রাও যোধার পুত্র রাও বিকা তাঁর নিজের একটি স্বতন্ত্র রাজ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৪৮৮ তে রাজস্থানের উত্তর-পশ্চিমে মরুভূমির মাঝে বিকানীর রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন। তার আগে ঐ ধূ ধূ বন্য স্থানকে ‘জংলাদেশ’ বলা হত। ধীরে ধীরে বিকানীর মধ্য এশিয়া থেকে গুজরাট উপকূল পর্যন্ত বাণিজ্যপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে, মরুভূমির মাঝে একটি মরূদ্যানের মত। রাও বিকার নির্মিত দূর্গ আজ ধ্বংসাবশেষ। এর ১০০ বছর পর নির্মিত হয় জুনাগড় দূর্গ। বিকানীরের ষষ্ঠ রাজা রাই সিংজীর আমলে (১৫৭১-১৬১১) রাজ্যের শ্রীবৃদ্ধি হয়। মুঘলদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের সেনাধক্ষ নিযুক্ত হন, আকবর ও জাহাঙ্গীরের আমলে। সেনাপতি হিসাবে যুদ্ধজয়ে মুঘল সম্রাট তাঁকে পুরস্কৃত করেন ও গুজরাটে তাঁকে জায়গীর প্রদান করেন। জায়গীর থেকে পাওয়া বিশাল পরিমাণ রাজস্বে তিনি ১৫৮৮ তে জুনাগড় দূর্গের নির্মাণ কার্য শুরু করেন। মহারাজা ছিলেন স্থাপত্য ও কলার পৃষ্ঠপোষক। জুনাগড় দূর্গের ভিতরে তার পরিচয় মেলে। বিকানীর (Bikaner) আজ রাজস্থানের চতুর্থ বৃহত্তম শহর।
জুনাগড় দূর্গ (Junagarh Fort) ছাড়াও বিকানীরে দেখার মত আছে মধ্যযুগীয় নানান হাভেলি, প্রাচীন জৈন মন্দির, লক্ষীনাথ মন্দির, লালগড় প্যালেস, দেবী কুন্ড ও ক্যামেল ব্রিডিং ফার্ম। আর অবশ্যই দেশনোকে করণীমাতা মন্দির।
প্রথম দিনঃ
দেশের পশ্চিম প্রান্তে বেলা অনেক বড়, তাই প্রথম দিন পৌঁছনোর পর হাতে অনেকটা সময় দিনের আলো থাকায় বেরিয়ে পড়লাম শহরের প্রাচীন হাভেলি ও মন্দিরগুলি ঘুরে দেখতে…
হাভেলিঃ প্রাচীন কাল থেকেই বাণিজ্যের কারণে সমৃদ্ধি বিকানীরের। ধনী মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীদের বসবাসের জন্য বানানো কিছু মধ্যযুগীয় হাভেলি (Haveli) আজও আছে বিকানীরে। ১৭শ ও ১৮শ শতকে লাল বেলে পাথরে নির্মিত হাভেলি গুলি একাধারে সে যুগের বৈভবের যেমন সাক্ষ্য, তেমনই শিল্প মন্ডিত। স্থাপত্যে রাজপুত থেকে মুঘল, এমনকি ব্রিটিশ ঘরানারও ছাপ চোখে পড়ে। পাথরের উপর জালির সূক্ষ কারুকাজ, পাথরের ছাজা, প্রসারিত ঝারোখা – সব মিলিয়ে হাভেলি গুলির বাইরের অংশের সুন্দর কারুকাজ দেখার মত।
ভান্ডেশ্বর জৈন মন্দিরঃ ১৫ শতকে জৈন ব্যবসায়ী ভান্ডাশাহ অসওয়াল দ্বারা নির্মিত অসাধারণ কারুকাজময় মন্দিরটি। ৫ম জৈন তীর্থঙ্কর সুমতিনাথের উদ্যেশে উৎসর্গীত। লাল বেলে পাথর ও মার্বেলে নির্মিত মন্দিরটিতে অসাধারণ লিফ পেইন্টিং, ফ্রেস্কো ও কাঁচের উপর কারুকার্য চোখে পড়ে। মন্দিরিটি গর্ভগৃহ, অন্তরলা, মহামন্ডপ ও অর্ধমন্ডপ – এই অংশে বিভক্ত। মন্দিরের দেওয়াল ও থামগুলি দারুণ সুন্দর চিত্র ও ভাস্কর্যে অলঙ্কৃত। ভিড় বিশেষ না থাকায়, মন্দিরের পুজারী নিজে থেকেই আমাদের বেশ কয়েকটি ছবি তুলে দিলেন এই মন্দিরের কারুকাজগুলির সাথে।
লক্ষীনাথ মন্দিরঃ মহারাজা রাও লঙ্কারন দ্বারা নির্মিত মন্দিরটি বিকানীর প্রাচীনতম মন্দির গুলির একটি। মন্দিরের ভিতরে আছে রুপোর কারুকাজ।
শেষ বিকেলে এই মন্দির চত্বর থেকে শহরের গন্ডি যেখানে মরুভূমিতে মিশেছে, সেই দিগন্তে সূর্যাস্তের এক দারুণ রূপ দেখেছিলাম।
দ্বিতীয় দিনঃ
পরদিন সকালে হোটেল থেকে হাঁটা পথে পৌঁছে গেলাম জুনাগড় ফোর্টে।
জুনাগড় দূর্গঃ
রাজস্থানের অন্যান্য কেল্লার মত এই কেল্লা কিন্তু কোন পাহাড়ি টিলার উপর অবস্থিত নয়, এটি সমতলের মাঝেই নির্মিত। বর্তমান বিকানীর শহরের প্রায় মধ্যিখানে বিশাল জুনাগড় ফোর্ট। আগেই বলেছি যে ১৬ শতকে মহারাজা রাই সিংজী নির্মাণ করেন এই কেল্লা। লাল বেলে পাথরে নির্মিত ৯৮৬ মিটার দীর্ঘ বিশাল প্রাচীর চারকোণা দূর্গ কে ঘিরে রেখেছে। এই প্রাচীর প্রস্থে প্রায় ১৫ফুট ও উচ্চতায় ৪০ ফুট। ৩৭টি বুরুজ আছে কেল্লাকে ঘিরে। কেল্লার সাতটি প্রবেশদ্বার। অনেক গুলি প্রাসাদ, মহল, প্যাভিলিয়ন ও কিছু মন্দির রয়েছে এই কেল্লার ভিতরে। ১৫৮৮ তে শুরু হয়ে ১৫৯৩ তে নির্মাণকার্য শেষ হবার পরেও আরো প্রায় তিন শতক ধরে একটু একটু করে গড়ে উঠেছে প্রাসাদ ও মহল গুলি। কেল্লা জুড়ে লাল ও সোনালী বেলে পাথরের উপর খোদিত ভাস্কর্য্য। রাজস্থানী শৈলীতে চিত্রিত ও অলঙ্কৃত দূর্গের অন্দর সজ্জা। ১৯৬১ তে জুনাগড় কেল্লায় গড়ে ওঠে মিউজিয়াম। অসাধারণ স্থাপত্য ও ততোধিক সুন্দর শিল্পমন্ডিত অন্দরসজ্জার কারণে জুনাগড় রাজস্থানের অন্যতম সুন্দর এক দূর্গ।
সকাল ১০টায় খোলে জুনাগড় ফোর্ট। কেল্লার মূল প্রবেশ পথ সূরয পোল। প্রবেশ দ্বারের দু দিকে দুটি বিশাল হাতির মূর্তি। একপাশে সেযুগে রাজপুতদের আগমন ও প্রস্থানের সময় সঙ্গীত পরিবেশনের মঞ্চ। কেল্লার অন্যান্য গেট গুলি হল করন পোল, দৌলত পোল, চাঁদ পোল, ফতেহ পোল প্রভৃতি। মূল প্রবেশদ্বার ও প্রাসাদের মাঝে একটি চতুর্ভুজাকৃতি জায়গা ও তারপর আরকেটি দ্বার – ত্রিপোলিয়া গেট। এরপর রাজ পরিবারের উপাস্য স্থল হরি মন্দির। দূর্গের ভিতরের মহল গুলির দেওয়ালে সূক্ষ কারুকাজ দেখলে অভিভুত হতে হয়। এমনকি কোন মহলের ছাদের অংশেও আছে কারুকাজ। মহলগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –
• ফুল মহল – প্রাচীনতম এই মহলটি রাজা রাই সিংজীর আমলে নির্মিত। শ্বেত পাথরে তৈরি খিলান ও দেওয়ালে আঁকা চিত্রের তুলনা হয় না।
• অনুপ মহল – একটি বহুতল মহল, যা ছিল সেযুগের প্রশাসনিক দপ্তর। এর ভিতরের আয়না খচিত, অলঙ্কৃত কাঠের সিলিং, ইতালিয়ান টাইলস, জাফরির কাজ, লিফ পেইন্টিং দেখার মত।
• চন্দ্র মহল – এই মহলে আছে রাজ পরিবারের ব্যবহৃত বিলাসবহুল ঘর, যেখানে চোখে পড়ে সোনায় মোড়া মূর্তি ও মূল্যবান পাথর খচিত চিত্রকলা। রাজার শয়ন কক্ষে এমনভাবে আয়না লাগানো, যাতে মহলে কেউ প্রবেশ করলেই দেখতে পাওয়া যেত বিছানায় শুয়েই।
• করন মহল – রাজা করন সিং ১৬৮০তে ঔরঙ্গজেবকে যুদ্ধে হারানোর স্মারক হিসাবে এই মহলটি নির্মাণ করেন। এটি দূর্গের অন্যতম সুন্দর প্রাসাদ, যা এক সময় ছিল ‘দিওয়ান-ই-আম’। মহলের লাগোয়া বাগান। জাঁকজমক পূর্ণ এই মহলের দেওয়ালে লাক্ষা কাচ ও আয়নার কাজ দেখলে চমতকৃত হতে হয়। মহলে রয়েছে একটি সিংহাসন।
• বাদল মহল – মহলে রয়েছে শেখাবতী ঘরানার পেইন্টিং। দেওয়ালে ফ্রেসকো চিত্র।
• গঙ্গা মহল – বিংশ শতাব্দীতে রাজা গঙ্গা সিংয়ের আমলে নির্মিত মহলটিতে আছে এক বিশাল দরবার হল, যার ভিতরে আছে মিউজিয়াম।
দূর্গের অসাধারণ মিউজিয়ামটিতে সে যুগের রাজপুতদের জীবন যাত্রার পরিচয় পাওয়া যায়। মিউজিয়ামে আছে সংস্কৃত ও পার্সীতে লেখা কিছু পান্ডুলিপি, চিত্রকলা, অলঙ্কার, রাজপুতদের ব্যবহৃত পোশাক, আসবাব, অস্ত্র শস্ত্র, ফরমান, পোট্রেট গ্যালারি, নানান তৈল চিত্র, দেবদেবীর মূর্তি। রাজপুত রাজাদের ব্যবহৃত ফিটন গাড়ি ও এমনকি ব্রিটেন থেকে ভেট পাওয়া প্রাইভেট প্লেনও রাখা আছে মহলের নিচে।
একপাশের সিঁড়ি বেয়ে ওঠা যায় দূর্গের মাথায়। উপর থেকে নিচে হাতিশাল, ঘোড়াশাল ও দূরে মরু শহরের দৃশ্য দেখা যায়। প্রাসাদের নিচে পৃথিবীর দুটি দুষ্প্রাপ্য কামানের একটি রাখা আছে, যেটি এসেছিল ফ্রান্স থেকে।
জুনাগড় দূর্গের আরেকটি বিশেষত্ব হল এই যে, এই দূর্গ কখনও শত্রুর আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নি। রাজপরিবারের বর্তমান আবাস ৩ কিমি দূরের লালগড় প্যালেস।
জুনাগড় দূর্গ দেখতে একটা গোটা বেলা লেগে যায়। দুপুরের পর আবার বেরোলাম অটোয় চড়ে শহরের বাইরের দ্রষ্টব্য গুলি দেখতে…
দেবী কুন্ডঃ
মূল শহর থেকে ৮ কিমি দূরে রাজপুত রাজ বংশের সমাধি ক্ষেত্র দেবী কুন্ড সাগর (Devi Kund Sagar)। সব মিলিয়ে ১৩৮টিরও বেশি সুদৃশ সমাধি স্তম্ভ বা ছত্রী আছে দেবী কুন্ডে। মাঝখানে একটি জলাশয় ও তার দু পাশে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে সমাধি গুলি। সবচেয়ে প্রাচীন সমাধিগুলি লাল বেলে পাথরে তৈরী হলেও বেশির ভাগই শ্বেত পাথরে নির্মিত। স্থাপত্যে উতকৃষ্ট রাজপুত শৈলীর নিদর্শন। মহারাজা অনুপ সিং ও করন সিংয়ের সমধি স্তম্ভ গুলি সবচেয়ে আকর্ষনীয়।
প্রসঙ্গত বলে রাখি যারা ‘সোনার কেল্লা’ বইটা পড়েছেন, তাদের যদি মনে পড়ে, যে যোধপুর থেকে বিকানীরের পথে এই দেবীকুন্ডেই নকল হাজরাকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যাবার একটা ক্লাইম্যাক্স ছিল। যদিও সেটা পরে বোঝা যায় সাজানো ব্যাপার। কিন্তু সেই বই পড়েই প্রথম এই দেবী কুন্ডের নাম শুনি।
ক্যামেল ব্রিডিং ফার্ম (Camel Breeding Farm)
এশিয়ার বৃহত্তম উট প্রজনন ও গবেষণা কেন্দ্র, যেখানে তিনটি প্রজাতির কয়েক হাজার উটের দেখা মেলে। শহর থেকে ৮ কিমি দূরে মরুভূমির শুষ্ক জমিতে ২০০০ একর জুড়ে এই আশ্চর্য্য উট কেন্দ্র। ১৯৮৪ তে গড়ে ওঠে National Research Centre on Camels। এখানে রয়েছে উটের মিউজিয়াম। আবার উটের দুধের প্রোডাক্ট বিক্রি হয় এর ভিতরে। চাইলে উটের পিঠে চড়াও যায়। মরু শহরের কিনারে বিকেল বেলা একসাথে জড়ো হওয়া এত উট দেখতে বেশ লাগে।
করণীমাতা মন্দিরঃ
বিকানীর ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায় যদি না ৩০ কিমি দূরের দেশনোকে পৃথিবী বিখ্যাত করণীমাতা মন্দির (Karani Mata Temple) দর্শন করা হয়। যার আরেক নাম ‘চুঁহাবালা মন্দির’ (Rat Temple)। রাজ পরিবারের আরাধ্যা দেবী করণীমাতা ছিলেন এক স্বপ্নাদিষ্টা সাধিকা, যাঁকে দেবী দূর্গার অবতার বলে মান্য করা হয়। তিনি একটি গুহায় সাধনা করতেন। সেই গুহাকে কেন্দ্র করেই মন্দির। তবে এই মন্দিরের বিশেষত্ব হল হাজার হাজার, লাখ লাখ চুঁহা বা ইঁদুর। সর্বদা তারা মন্দিরের ভিতর ঘুরে বেড়াচ্ছে সশব্যস্ত হয়ে, কখনও আবারজড়ো হয়ে মন্দিরে দেওয়া দুধ বা প্রসাদ খাচ্ছে। ইঁদুরের জন্য মন্দিরের ভিতরে দুদন্ড দাঁড়ানো কঠিন। পায়ের উপর দিয়ে চলে যাবে শয়ে শয়ে ইঁদুর। স্থানীয় ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী করণীমাতার ভক্তদের আত্মাই ইঁদুরগুলির মধ্যে প্রকট। তাই ভুল বশত পায়ের তলায় ইঁদুর পৃষ্ঠ হলে মহা পাপ। এরকম ইঁদুরে ভরা মন্দির পৃথিবীতে আর একটিও নেই। দেশ বিদেশ থেকে বহু পর্যটক আসে এই আশ্চর্য্য মন্দির দেখতে।
বিকানীর থেকে বাসে একঘন্টায় পোঁছে যাওয়া যায় দেশনোকের এই মন্দিরে।
বিকানীরের খাওয়া দাওয়াঃ বিকানীরের বিখ্যাত রকমারী ভুজিয়া। এছাড়া বাকি খাওয়া দাওয়া এমন কিছু আহামরি নয়। তবে রাজস্থানের অন্যান্য শহরের মতই এখানেও মিলবে গাট্টে কি সবজি, পাপড় কারি, ডাল বাটি চূর্মা ও মির্চি বড়া।
দেশনোক থেকে ফিরতি বাসে বিকানীর পোঁছে, অনেক ভুজিয়া কিনে নিয়ে, রাতের ট্রেন ধরে ফিরে চলা দিল্লির পথে।
সম্পূর্ণ রাজস্থান ট্যুরে যোধপুর থেকে বাস বা ট্রেনে অথবা জয়সলমীর থেকে বাসে যাওয়া যায় বিকানীর। যোধপুর থেকে ২৫০ কিমি ও জয়সলমীর থেকে ৩৩০ কিমি দূরত্ব বিকানীরের। থাকার জন্য শহর জুড়ে নানা মানের বেশ কিছু হোটেল আছে।
– শুভ্রাংশু দাশগুপ্ত