আপনার ভাষা নির্বাচন করুন
পৌষের হিমেল আলটুসী সময়টা আসতে আসতে চলে যাচ্ছে।দুপুরের সোনালী রোদ মাখা মিঠে সময়টা আর কদিন পর পরিযায়ী পাখির মত বিদায় নেবে।দুপুরের উত্তরে বাতাসে পাতা ঝরেপরে আর আনমনা করেদেয় জানলার পাশে বসে থাকা অলস সময়টাকে।
ছাদে শুকনো হওয়া চালের গুঁড়ি,রাস্তায় নতুন গুড় ওয়ালার হাঁক,পরবের সময় এসেযায়।গ্রামীণ বাংলার পৌষ সংক্রান্তি মানেই পিঠে পার্বণ।বাংলার বিভিন্ন অংশে শুরু হয় প্রাচীন মেলা পরব।
মনটাও কেমন অস্থির র হয়েওঠে।ব্যাকূল হয় ধান কাটার পর ধুধু ফাঁকামাঠ দেখে।কি নিদারুণ শূন্যতা চারদিকে।বিষন্ন হয়েযায় মনটা।শীতের এই পরন্ত বেলায় যেন বারবার মনেহয় সবকিছু হারিয়ে যাচ্ছে।ঠিক এই সময় ই ভীষন মনটানে রুখাশুখা লাল মাটির দেশে যেতে।
যেখানে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে গ্রাম গুলি সেজে ওঠে পরবের রঙে।গানে আলপনায় আনন্দের রেশ বয়েযায়।টুসু ,মকরপরবে শালের পাতায় মাংসের পিঠৈ।শীতের তারাভরা রাতে কুয়াশা মাখা নীলজোছনায় রাত জেগে বাড়ি বাড়ি পরবের রাতের উৎসবে সামিল হতে।
টুসু দেখতে এবারের গন্তব্য পুরুলিয়া (মানভূম)।প্রতিবছরই টুসু পরবে মানভূমের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বাড়ানোই আমার পাগলামী। গত বছর টুসু দেখতে পুরুলিয়া আর এক প্রান্তে ছিলাম তার নাম দূয়ারসিনি।এবার ছিলাম পুরুলিয়া জেলার জয়পুর ব্লকের তুন্তা গ্রামে।এক সাঁওতাল বাড়ি ছিল আমার ঠিকানা।উদ্দেশ্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে রাতে টুসু জাগরন গান শুনবো।টুসু বিদায় দেখবো তাই খোঁজ করা সেই গ্রাম গুলো যেখানে টুসু ভালোহয়।
টুসু মূলত পুরুলিয়া, ঝাড়খণ্ড, বাঁকুড়া,ঝারগ্রাম, বর্ধমান এই অঞ্চল গুলোতে দেখাযায়।বিশ্বায়নের হাওয়ায় যা এখন অনেকটাই লুপ্তপ্রায় তবুও কিছু অঞ্চলে থেকে যাওয়া আনন্দের ছোঁয়াচ পেতে বেড়িয়েপরা।টুসু ব্রত শুরু হয় অগ্রহায়ন সংক্রান্তি থেকে পৌষ সংক্রান্তি পযর্ন্ত একমাস ধরে পালন করে গ্রামের কুমারী মেয়েরা।মাঠ থেকে বাড়িতে একগোছা ধান এনে তাকে পিঁড়েতে স্থাপন করে ,একটি পাত্রে চালের গুঁড়ো দিয়ে তাতে তুঁষ রাখাহয়(তুঁষ থেকেই টুসু একাংশের মত)।প্রতিসন্ধ্যায় তাতে হলুদের ফোটা,গোবর,কড়ি,ধান ,দূর্বা,ফুল দিয়ে পুজো করাহয়।
মকর সংক্রান্তি র আগের রাতে মেয়েরা খাওয়া দাওয়ার পর ঘর পরিষ্কার করে গোবরের প্রলেপ দিয়ে।তার উপর ফুল ,প্রদীপ,কাগজের তৈরী সুসজ্জিত চৌডল দিয়ে ।টুসু জাগরন গান করেথাকে।এই গানের বিষয় হল লোকগাথা, সামাজিক, ধর্মীয় বিভিন্ন দিক। গায়িকার কল্পনা,শোক,আনন্দ নিজেস্ব ভাবের মধ্যামে গান হয়ে পরিবেশিত হয়।যা শুনতে বেশ ভাললাগে।
এইভাবে সারারাত গানে গানে টুসু পূজা করেন তারা ।গ্রামে গ্রামে প্রতি বাড়ি থেকে টুসু জাগরনের গানের গীত ভেসে আসে ভারি সুন্দর শুনতে লাগে।এ যেন এক গানের উৎসব।যারা একটু অন্যরকম ভাবে বাংলার এইসব লোকায়েত মাটির পরব গুলোর ঘ্রাণ নিতে চান তাদের কাছে অনায়াসেই টুসুপরব একটা প্রধান উৎসব। আপনারা যেতেই পারেন পরবের পুরুলিয়াকে দেখতে, অদ্ভুত এক মনের প্রশান্তি পাবেন। টুসু পরব ই পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর,ঝাড়খন্ডের প্রধান উৎসব।এইভাবে সারারাত টুসু জাগরন করে পরদিন মকর সংক্রান্তি র দিন দুপুরে সেই সুসজ্জিত টুসু চৌডল নিয়ে গ্রামের মেয়েরা গান গাইতে গাইতে মাঠের আল পথ ধরে নিকটবর্তী নদী জলাশয়কে টুসু কে বিসর্জন বা বিদায় দেয়।রাঢ় বাংলায় টুসু মেয়ে রূপে পূজিত হয়।
এই টুসু বিদয়কে কেন্দ্র করে মকর সংক্রান্তির দিন বিভিন্ন অঞ্চলে মেলাবসে।লালমাটির মানুষের মধ্যে টুসু ও মকর পরবের আনন্দের জোয়ার সারাবছর বয়েযায়। এটাই ওদের দূর্গা পূজোর মতো। নতুন জামা-কাপড়,খাবার দাবার তৈরি হয় সবাই উৎসবে সামিল হয়।টুসু ঘিরে অনেক গান রচনা হয় গ্রামের রাস্তায় সেই গান ছড়িয়ে পরে।
হাওড়া থেকে পুরুলিয়া গামী প্রচুর এক্সপ্রেস ও পেসেঞ্জার ট্রেন আছে।
চক্রধরপুর, রূপসী বাংলা, রাঁচি ইন্টার সিটি,লালমাটি প্রভৃতি।
এছাড়াও ধর্মতলা থেকে পুরুলিয়া বাস সার্ভিস চালু আছে রাত্রিতে চাপলে সকালে পৌঁছে যাবেন।
পুরুলিয়া বিভিন্ন অঞ্চলে টুসু পরব ভালোহয় মেলা বসে পুরুলিয়া স্টেশনের কাছে।
ঐ অঞ্চলে থাকতে হলে স্টেশনের কাছে প্রচুর হোটেল আছে আছে ধর্মশালা।
এছাড়া পুরুলিয়া গরজয়পুর, হুড়া, বলরামপুর, প্রভৃতি অঞ্চলে টুসু ভাল হয়।