আপনার ভাষা নির্বাচন করুন
মুকুলকে মনে আছে তো ? সেই কবে ছোট্টবেলায় রুপোলি পর্দায় দেখা ফেলুদার সঙ্গে সোনার কেল্লা।আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করা যদি আর কোথাও নাও যাই তবে একবার হলেও যাব সোনার কেল্লায় । আসল নাম জয়সলমীর ফোর্ট। শীতের মরসুম ছাড়া এই মরুভুমি শহরে যাওয়া সম্ভব নয়।যদি সত্যি যেতে চান রাজপুতদের কেল্লায় তবে ক্যালেন্ডার দেখে যাওয়াই ভালো।নতুন বছরের শুরুতে মরুশহরে এক বর্নাঢ্য উৎসবের আয়োজন হয় নাম জয়সলমীর ডেসার্ট ফেস্টিভ্যাল ।
তিনদিনের এই ফেস্টিভ্যালের আয়োজক রাজস্থান স্টেট ট্যুরিজম কর্পোরেশন।মরুশহর সেজে ওঠে এই ফেস্টিভ্যালকে কেন্দ্র করে।সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় ফেস্টিভ্যালের সুচনা।রাজকীয় রাজস্থানের রঙীন পোশাকে সকলে সেজে ওঠেন।এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষন নানান রঙে সাজান মরুভুমির জাহাজ উট।ক্যামেল ক্যারাভান দেখতে পাওয়া যায় এই সময় জয়সলমীরে আসলে।
বিরাট শোভাযাত্রা এসে বিরাম নেয় উৎসব প্রাঙ্গনে ।মঞ্চে তখন নানান প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি চলছে । ব্যাকড্রপে বিরাট সোনার কেল্লা।দ্বাদশ শতকে তৈরী হলুদ বালি পাথরে তৈরী হওয়া এই দুর্গ আজও এক বিষ্ময়।সুর্যের প্রথম রশ্মি যখন সকাল বেলায় এই কেল্লার ওপর পড়বে তখন আপনিও মুকুলের মতো বলে ঊঠবেন “সোনার কেল্লা”!
এদিকে মঞ্চে তখন প্রতিযোগীরা প্রস্তুত।একে একে শুরু হয় পাগড়ী প্রতিযোগীতা।রাজস্থানে পাগড়ী হল আন বান শান।তাই সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে যিনি নিখুঁত ভাবে পাগড়ী পরতে পারবেন তিনিই বিজয়ী।এরপর শুরু হয় সেরা গোঁফ কম্পিটিশন।এই উৎসবের জন্য অনেকে সারা বছর ধরে গোঁফ পরিচর্যা করেন ।লালন পালন করেন তাঁদের সাধের গোফ।।ফেস্টিভ্যালের মঞ্চে শুরু হয় দীর্ঘ ও পুরুষ্টু গোঁফের প্রতিযোগিতা। ছয় থেকে আটফুট লম্বা গোঁফ তো বায় হাত কা খেল।বারো চোদ্দ ফুট লম্বা গোঁফও দেখা যায়।সেরা গোঁফ পায় সেরার পুরস্কার ।এরপর একে একে পুরুষ ও মহিলাদের নিয়ে মহেন্দ্র মূমল বিউটি কন্টেটেস্ট।রাজকুমার মহেন্দ্র ও রাজকুমারী মুমল এর বিয়োগাত্মক প্রেম কাহিনী লোকের মুখে মুখে ঘোরে।সেই লোক কাহিনীকে মনে করাতেই এই প্রটিযোগিতার আয়োজন।
উটেদের পোলো খেলা,বিদেশী বনাম স্থানীয় মানুষদের মধ্যে দড়ি টানাটানি এই ফেস্টিভ্যালের অন্যতম আকর্ষন।এক এক দিন এক এক রকমের খেলা ।রাতে আপাদমস্তক শীত পোশাকে নিজেকে ঢেকে খোলা আকাশের নিচে এনজয় করুন রাজস্থানের লোকগান ও লোকনৃত্য।বাড়তি পাওনা রাজস্থানি হ্যান্ডিক্রাফট । ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতির এমন যুগলবন্দী আর কোথাও দেখা যায় বলে জানা নেই।
সাধারনত মরুশহরে থাকা খাওয়া ও বেড়ানোর খরচ একটু বেশি।তার ওপর ফেস্টিভ্যালের সময় তিন দিনের প্যাকেজে রেটটা একটু বেশীই হয়।যত দিন এগিয়ে আসবে ততই লাস্টমোমেন্ট বুকিং এ প্যাকেজ রেট ও বাড়তে থাকবে।তাই আগে থেকে থাকার জায়গা বুক করে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।অবশ্য আপনি যদি যোধপুরকে সেন্টার করে একদিনের জন্য জয়সলমীর যান তাহলে অন্য কথা।২০২১ এ সাত থেকে নয় ফেব্রুয়ারী এই উৎসবের আসর বসার কথা যদিও এই কোভিড পরিস্থিতিতে নির্দিস্ট ভাবে কোন কিছুই বলা যাচ্ছে না ।
যদি নিশ্চিত ভেবে থাকেন যে এবারের শীত কাটাবেনই ওই মরু শহরে তাহলে কিভাবে যাবেন সেটা তো জানতে হবে।জয়সলমীরে কোনো এয়ারপোর্ট নেই ফলে আকাশ পথে গেলে নামতে হবে যোধপুর।সেখান থেকে সড়ক পথেই পৌঁছতে হবে জয়সলমীর।
হাওড়া থেকে জয়সলমীর যাওয়ার সরাসরি ট্রেন আছে তবে রোজ নেই ।কলকাতা সহ অন্যান্য বড় শহর থেকে সরাসরি যোধপুরের ট্রেন আছে।যোধপুরে নামলে আবার সড়ক পথে যেতে হবে।
জয়সলমীরে দেখার অনেক কিছু আছে ।ফেস্টিভ্যালের ফাঁকে ফাঁকে সাইট সিন প্ল্যান করে দেখে নিতে পারেন জায়গাগুলোকে।তবে অন্যকোথাও যান আর না যান কিন্তু একবারের জন্যে হলেও পায়ে হেঁটে দেখে নেবেন সোনার কেল্লা!