আপনার ভাষা নির্বাচন করুন
Nameri থেকে এবার রওনা দিলাম মাজুলি র দিকে, প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টার স্বপ্নের যাত্রাপথ।।। স্বপ্ন ই বটে, কারন আমাদের কাজিরাঙা র মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।।।। কাজিরাঙা র মধ্যে দিয়ে চলেছি, গা ছম ছমে ব্যাপার।।। যাওয়ার পথে গন্ডার,হাতি, হরিন এর সাক্ষাৎ যেন জল ভাতের মত।। কোথাও হাতির দল ( Tuskers) নিজেদের মধ্যে আড্ডায় ব্যস্ত তো কোথাও গন্ডারের দল লাঞ্চ এ, আবার কোথাও হরিনের দল নিজেদের মধ্যে একান্ত আলাপচারীতায়।। ড্রাইভার কেশবের বাড়ি ও এখানেই ফলে ওর ও এই অঞ্চল হাতের তালুর মত চেনা, কি ফ্লোরা কি ফনা সব ওর নখদর্পণ এ। ওর সাথেই দেখতে দেখতে চলে এলাম ধানসিঁড়ি নদী র ওপরে, চমকে যাবেন না, নাম শুনে, কি অপূর্ব তার রূপ, পিছনে নীল পাহাড় আর তার থেকে নেমে আসা ধানসিঁড়ি।।। মুগ্ধ হয়ে গেলাম,কাজিরাঙা থেকে নুমালীগড়ের রাস্তা ও যেন চলমান পিকচার পোস্টকার্ড।। কখন ও পাহাড়ি ঢাল, কখন ও রাস্তা ক্রস করে চলা Tributaries আবার কখন ও পাহাড়ি ঢালে চা বাগান।।। নিমাতি ঘাটে এসে অপেক্ষা ফেরী বোটের গাড়ি সহ এবার মাজুলি র দিকে।।। প্রায় এক ঘন্টা লেগে গেল, গাড়ি সহ প্রায় একদিকের জন্য লাগল ৭৫০ টাকা।। এই একটি ঘন্টা শুধু দিগন্তরেখা র সাথে লুকোচুরি।। মাঝে মাঝেই ছোট্ট আইল্যান্ড গুলির খুনসুটি দিগন্তরেখা র সাথে।।। অবশেষে মাজুলি তে প্রবেশ।। চারিদিকে অদ্ভুত সবুজ, মাজুলি তে আসতেই স্বাগতম জানিয়ে গেলেন প্রায় তিন রকমের দুষ্প্রাপ্য কিংফিশার, আমাদের আস্তানা অসম ট্যুরিজমের গেস্ট হাউস।। প্রশান্তি গেস্ট হাউসে ঢুকতে যাব দেখি দুটো জায়ান্ট স্কুইরেল নিজেদের মধ্যে বাওয়াল করে চলেছে, আমাদের গাড়ি র আওয়াজে বেশ লজ্জায় শিশু গাছ বেয়ে পরিনতের মত উপরে চলে গেল।।। প্রশান্তি গেস্ট হাউস এর Sprawling campus বেশ মনোগ্রাহী, অবস্থান মাহাত্ম্যে এটাই সেরা থাকার জায়গা কিন্তু চারটি ঘর ছেড়ে বাকি গুলি Maintained হয়নি, বিছানার চাদর, পিলো কভার বেশ পরিষ্কার।। চারিদিকে ধান ক্ষেত, অজস্র ফুলের গাছ, প্রবেশ পথ টাকে নিয়ম করে পরিষ্কার করলেও কয়েকটা ঘরের পিছনে পরিষ্কার করা হয়না। লোকজন ও বেশি নেই।। Value for money ধরলে অনেক বেশি টারিফ কিন্তু বাকি অনেক কিছু বিচার করলে এটি ই সেরা জায়গা।।।খাওয়া দাওয়া র জন্য বাজারের সামনেই একটি রেস্তরাঁ আছে যেখানে অহমীয়া খাবার বা লাঞ্চ অবশ্যই খাবেন।।।মুখে লেগে থাকবে বহুদিন।।। ভেজ থালি নিয়ে সাথে চিকেন কারি নিয়ে নেবেন।।।।আর সাথে Hard drinks আনতে ভুলবেন না, ( যাদের দরকার)..এখানে কিন্তু Off shop নেই।।
আজ সকাল থেকেই মাজুলির এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত চষে বেড়িয়েছি।।। চারিদিকে সবুজ আর ছোট্ট ছোট্ট জলাশয়, তার উপর এসে পড়েছে সুপারি গাছের ছায়া।।সুপারি গাছেই আউনি পানের চাষ হচ্ছে, দারুন একটা কম্বিনেশন “পান- সুপারি ” চাষে।।।আউনি পান গুলি আকারে ছোট, পাতার টিপ গুলি আর ও সরু।।। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ।।। “মা জুলি ” কথা এসেছে মা মানে মা লক্ষী, আর “জুলি” মানে ঝোলা বা ঝঁপি।।। সত্যি ই মা লক্ষীর ভান্ডার।। মাজুলি তে গত দুদিন ধরেই ওদের বাসমতী খাচ্ছি, আকারে ছোট, অনেকটা রায়গঞ্জ এর তুলাইপঞ্জী র মত।। কখন ও লুইট নদী র পাশে তো কখন ও মিশিং উপজাতি র অন্দরমহল এ, মাজুলি আমায় পাগল করে দিয়েছে।। জেংরাই থেকে ঢেমাজি যাওয়ার পথ মনের ক্যামেরায় চিরদিন থেকে যাবে, জেংরাই তে অভিজ্ঞতা হল Roasted pork এর সাথে “সাই মদ” খাওয়ার।। চায়ের মত রঙ, Black rice এর Fermentation এ বানানো এই মদ খেতেও বেশ।। এক লিটার মাত্র ৫০ টাকা।। Roasted pork এর সাথে পাশে রাখা chilli pork ও সাঁটিয়ে দিলাম।।।কারি পাতা দিয়ে অদ্ভুত এক রান্না।।। হাল্কা ঝিম নিয়ে এবার গন্তব্য মিশিং ভিলেজ।। মিশিং ট্রাইব দের ঘরে কাটানো র অভিজ্ঞতা ই আলাদা।।বেশ অতিথিপরায়ণ এই মিশিং রা।। যেতেই ছোট ছোট নদী র মাছ আর ব্যাম্বু আচার দিয়ে অদ্ভুত এক রান্না দিয়ে আমাদের আপ্যায়ন শুরু হল, যদিও মাছ আমি খাইনা।।। “নগিন মদ” মানে আমরা যেটা হাড়িয়া বলি তা এসে গেল গ্লাসে করে সাথে ব্যাম্বু আচার আর শুকনো লংকা।। কি সারল্য ওদের চোখে মুখে।।। আমাদের খুব আদরে লাঞ্চ এর ব্যবস্থা ও করে দিল।।।সত্যি ই মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি না তো? বহুক্ষন ওদের সাথে কাটিয়ে এবার পালা লুইট নদীর তীরে সানসেট এর সাক্ষী থাকা।। কদিনের বৃষ্টি তে লুইট বয়ে চলেছে আপন খেয়ালে, তার বুকে রক্তিম আভার দ্যুতিময় উপস্থিতি উফফ ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।।। সন্ধ্যে বেলায় ঘরে ফেরা অবশেষে কিন্তু যা পেলাম তা বোধহয় ঠিক ভাবে এক্সপ্রেস করতে পারলাম না।।।
মিসিং দের সাথে সারাদিন
“Mi” – Men, “Yasing” – Worthy…..
North China থেকে বহুকাল আগে “Tani” গ্রুপের মানুষ জন আসামের আর অরুনাচল প্রদেশ এর সমতল আর উপত্যকায় বসবাস শুরু করে, যদিও তাদের Migration নিয়ে নিরন্তর গবেষণা এখন ও চলেছে।।।
আসাম ভ্রমণ এর আগে মিসিং দের নিয়ে বেশ কিছু বই এবং তথ্য সংগ্রহের পর যখন তাদের সাক্ষাৎ পাই মনে তখন এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ।।একটু দ্বিধান্বিত ছিলাম, ওদের প্রাইভেসি যেন কোনও ভাবেই বিঘ্নিত না করি।।।যখন ওদের গ্রামে “অনুপ্রবেশ ” করি তখন প্রায় সকাল এগারোটা হবে।। মিসিং দের ব্যস্ততা চরমে৷৷ বাঁশের কঞ্চি কেটে ঘর, বাঁশের মাচানের উপরে।।। ঘরের পিছনে বয়ে চলেছে নদী কেটে আনা খাল,ফি বছর বন্যার কবলে এই গ্রাম প্রায় ভেসে যায়, আবার তারা ঘর বাঁধে বন্যার জল নেমে গেলে।।।।হেঁটে চলেছি হঠাৎ এক বৃদ্ধের আমার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান,ওদের ভাষায় আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।।। এ সুযোগ কি ছাড়া যায়৷৷ এক্কেবারে রান্নাঘরে।।যেতেই আগুনে ঝলসানো শুয়োরের মাংস,দিশি মদ, শুকনো লংকার গুড়ো,বাঁশের আচার আর চাটনি।।। মাথায় একটা হাল্কা ঝিম আর অদ্ভুত ভাষার বিনিময় চলতে থাকে।।।একে একে তখন স্থানীয় কুচো মাছ ভাজাও হাজির, আমি যদিও সে স্বাদ থেকে বঞ্চিত কারণ মাছ কোনও কালেই খাই না।।।কুচো মাছের ঝোল ও হাজির ক্রমান্বয়ে।। সে ও এক অদ্ভুত প্রিপারেশন।।। মিসিং রমনী খুন্তি ছেড়ে দিয়েছে তখন তার স্বামী র হাতে, ভাত হয়ে গেছে, বিভিন্ন স্থানীয় সব্জী দিয়ে এক পদ তরকারি হতেই এক কোনে থাকা কাঁচা মাংস এক ছো মেরে তুলে নিয়ে কড়াইয়ে।।। লংকার গুঁড়ো, তেঁতুল,বাঁশ দিয়ে চমৎকার এক শুয়োরের মাংসের পদ তৈরি।।। বেলা তখন বেশ গড়িয়েছে, পেটে মদ, মাংস এর পাচন প্রায় শেষ, মিসিং রমনী কাঠের পিঁড়ে পেতে বসতে আদেশ দিতেই আমরা বাধ্য ছেলের মত অনুসরণ করলাম।।।পেট পুজো সাথে হাত – পা ছুঁড়ে ভাষার বিনিময়৷৷ সূয্যিমামা র পাটে যাওয়া অবধি চলে ওদের জীবনযাপন বোঝার কাজ।।।সন্ধ্যে নামে, দেহ চলে নিজ নিকেতনে কিন্তু মন থেকে যায় মিসিং দের সাথে।আগামীকাল সত্র গুলি ঘুরে দেখব।।
-সঞ্জয় গোস্বামী-