সিরিং ভাই আর ইয়েতি


মা দুগগা বাবার সাথে খুব ঝগড়া করছেন টের পাচ্ছি এখান থেকেই। বাবা চিৎকার করছেন একবার তো পরের মুহুর্তেই মায়ের ঝংকার। তারপর অনিবার্য ভাবে কান্নাকাটি। ফলে কোলকাতা ভেসে যায়। চারদিকে থৈ থৈ জল। প্যাচপ্যাচে কাদা। অথচ বর্ষাকাল সেই কবেই বানপ্রস্থে গেছে। এই অবস্থায় বন্ধু সমাধান দিল, ‘চল পলায়ে ZIই’। উত্তম প্রস্তাব। কিন্তু যাই বললেই তো যাওয়া যায় না। ‘কাক্কেস্বর কুচকুচে’র মত প্রথমে আঁক কেটে হিসেবে করে দেখতে হবে কোথায় কোথায় যাওয়া যায়। পরে আবার আঁক কষে বার করতে হবে কিভাবে যাওয়া যায়। খরচের হিসেবটাও ‘ত্রৈরাশিকে’ ফেলব না ‘এলসিএম’ হবে সেটাও পরামর্শ করার আছে। মাঝখান থেকে কেউ কেউ আবার ফুট নোট দিয়ে বসল, ‘যেতে পারি; কিন্তু কেন যাব’। অবশ্য ফুট নোটটি তৎক্ষণাৎ বহু ‘ফুটাঘাতে’ বাতিল হয়ে গেল। তারপর কোত্থেকে কি হল জানি না ঘুম ভাঙ্গতে দেখি নিউ জলপাইগুড়ি স্টেসনে আমাদের ট্রেনটা ব্রেকফাস্ট খাচ্ছে। নেমে পড়তে হল। সামনে একটা মাহিন্দ্রা মার্শাল দাঁড়িয়ে আছে। গাড়িটা সম্ভবত কোম্পানি থেকে বেরোবার দৌড়ে প্রথম হয়েছিল। সামনের ফেন্ডারটা খানিকটা ভাঙ্গা। বনেটের কভারটা দড়ি দিয়ে বাঁধা। গদিটা এধার ওধার ছেঁড়া। পাসে ড্রাইভার সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। পুরো পাকাপোক্ত যামিনী রায়ের মডেল। তবে মুখের হাসিটা যাকে বলে ‘এক্কেবারে হাইক্লাস’। আলাপ হল। সুব্বাদা। বয়েস নাকি বাহান্ন। আমরা ইতস্থত করছি দেখে আমাদের গাড়ির ভেতরে ঢুকতে বলল। জানলাম আমরা যে ‘রুট’ ঠিক করেছি তাতে নাকি এখনো সব গাড়ি যায় না। সেটা পরে অবশ্য হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। ঐ গাড়ি না থাকলে আমাদের ঘোরা হতই না। কি মজবুত গাড়ি আর আরো মজবুত ড্রাইভার। যাই হোক। সারাদিন ঠেক খেতে খেতে দুপুর নাগাত এসে পৌঁছলাম ঋষি নদীর ধারে। গাড়ি দাঁড়াল রাস্তার ওপর। স্থানীয় লোকদের কথায় জানা গেল এখান থেকে নাকি মাইলটাক হেঁটে যেতে হবে। গাড়ি যাবে না। সাথে তল্পিতল্পা খুব বেশি না হলেও ভারী তো বটে। তাছাড়া খিদেও পেয়েছে খুব। হাঁটতে হবে শুনে আমাদের মুখে হাঁ। এইবার সুব্বাদার খেলা দেখলাম। বলল, ‘হুঃ কয় নাকি গাড়ি যাবে না! চল দেখি তো রাস্তা কেমন খারাপ!” বলে গাড়িটা নদী উপত্যকায় নামিয়ে দিল। চারিদিকে বড় বড় বোল্ডার ছড়িয়ে আছে। রাস্তা বলে কিছুই নেই। পাথর ফেলা একটা মাঠের মধ্যে দিয়ে এঁকে বেঁকে দিব্যি গাড়ি হাঁকিয়ে নিয়ে গেল। জেমস বন্ড দেখলে লজ্জা পেতেন। যাইহোক সুব্বাদা একেবারে নদীর ধারে এসে গাড়িটা দাঁড় করাল। আর সত্যিই যাওয়া যাবে না। অবশ্য দরকারও নেই। নদী পেড়িয়ে ঠিক উল্টোদিকেই ‘হোম-স্টে’। সেখানেই আজ দেহরক্ষা করতে হবে। অবশ্য বাইরে থেকে ঘরের চেহারা দেখে খুব একটা খুশি হতে পারলাম না। বাড়িগুলো ঠিক যেন সুকুমার রায়ের ‘বুড়ির ঘর’; ‘জীভ দিয়ে চেটে রাখে সুতো দিয়ে বেঁধে’। নদীটা খুব চওড়া নয়। এই ফুট বিশেক হবে। জলও গভীর নয়। হাঁটু ডোবা, কোথাও বা কোমর ডোবা মতন। একটা নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো করা আছে নদী পেরোবার জন্য। শুনলাম নাকি এই নদী সারাবছর ভাজামাছ সোজা করে খেতে জানে না। বর্ষাকালে একেবারে ‘ফুলন দেবী’ হয়ে যায়। সামনে যা কিছু পায় সবই তখন ‘খাল্লাস’। স্থায়ি সেতু বানানো বেশ চাপের। সাঁকো পেড়িয়ে ঘরে ঢুকলাম। চারিদিকে অপূর্ব পরিবেশ। বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে কয়েকটা কটেজ নিয়ে হোম-স্টে’টা বানানো হয়েছে। চারিদিকে ফুলের গাছ। মালিকের নাম ‘সেন্ট সেবাস্তিয়ান’। চুপি চুপি বলে রাখি ভদ্রলোককে ‘সেন্টহুড’টা আমিই দিয়েছি। একটু আধ্যাত্মিক হাবভাব আছে। খুবই ভালো একটা চরিত্র। সবচেয়ে বড় কথা স্থানীয় লোকজন ওনাকে বেশ ভক্তি শ্রদ্ধা করে। যাইহোক তিনি ছিলেন না তখন। ওনার মেয়ে সব কিছু দেখাশোনা করে। সেই বলল যে আমরা যেন ঘরে গিয়ে বসি। মালপত্র সব গাড়ি থেকে আনিয়ে নিচ্ছে। তারপর যথারীতি আমাদের বন্ধুদের মধ্যে ঘরের দখল নিয়ে ‘রক্তাক্ষয়ী সংগ্রাম’ হল। সে সব মিটে গেলে বারান্দায় বেড়িয়ে দেখি কি আমাদের ব্যাগগুলো সবকটা মিলে একে অপরের ঘাড়ে চেপে সাঁকো পেড়িয়ে আসছে! চোখ ভালো করে কচলে নিতে নজরে এল ব্যাগগুলোর নিচে দুটো সরু সরু পা বেড়িয়ে আছে। কাছে এলে দেখলাম শুধু পা’ই না পাশে দুটো হাতও আছে আর একটা মুণ্ডুও। আর সেই মুণ্ডুতে একটা অদ্ভুত হাসি। আমরা শুধু এখানে না এরপর আরো উঁচুতে উঠবো। থাকতেও হবে দিন দশেক মত। তাই কাপড় চোপড়ের সংখ্যা খুব কম নয়। সবই মোটামুটি শীতবস্ত্র। মোটের ওপর মোটটা বেশ ভারীই। আমাদের সবার ব্যাগ মিলিয়ে ওজন যা হবে তা আমার একার পক্ষেই বওয়া শক্ত। আর এই সিরিঙ্গে লোকটা কিনা সবকটা একসাথে নিয়ে আসছে! আর কি আশ্চর্য সমাপতন। আলাপ হতে প্রায় সবকটা দাঁত বের করে জানাল তার নাম নাকি ‘সিরিং’। খুব হাসি খুসি লোক। আমাদের সব রকম ফুট ফরমাস অত্যাচার হাসি মুখেই মেনে নিচ্ছিল। মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে গেছে। আমরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছি। বিকেল দিকে সিরিং দুজনের মোবাইল নিয়ে কোথায় যেন চলে গেল। বেশ সন্ধ্যে করে ফিরে এল। মোবাইল দুটোই প্রায় ফুল চার্জড। অনেক ধরা ধরি করে জানতে পারলাম যে মাইল দুয়েক দূরে রাস্তায় একটা দোকানে গিয়ে চার্জ দিয়ে এনেছে। কি অফুরন্ত প্রানশক্তি! দুপুরবেলা খাওয়ার পরে ঘরে শুয়ে আছি। জানলা দিয়ে দেখি সিরিং একটা খেপলা জাল দিয়ে নদীতে মাছ ধরছে। আমি উঠে পড়লাম। বেড়াতে এসে দুপুরবেলা শুয়ে থাকার মানে হয় না। সাঁকো পেরিয়ে নদীর ওপারে সিরিঙ্গের কাছে চলে গেলাম। সে তখন হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে বেশ কায়দা করে জাল ফেলছে। নদীতে জল কম থাকলে কি হবে স্রোত খুব। তার ওপর পাথরের ওপর জমে থাকা শেওলা খুব পিছল। আমি দাঁড়াতেই পারছিলাম না। পড়ে গেলে ক্যামেরাটা যাবে তাই পাড়েই বসে রইলাম। সিরিং কিন্তু একটা দারুণ পদ্ধতিতে ব্যালান্স করছিল। একটা বড় লাঠি মাঝ বরাবর দাঁতে কামড়ে রেখেছিল। ঠিক যেমনটা দড়ির ওপর দিয়ে যারা হেঁটে কসরত দেখায় তাদের মত। খানিক্ষণের মধ্যে বেশ কিছু মাছ ধরে ফেলল সিরিং। বেশিরভাগই ‘ট্রাউট’। আরো কিছু নাম না জানা মাছও ছিল। এগুলো নাকি আমাদের সন্ধ্যেবেলার খাবার। রাত্তিরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আড্ডা মারার সময় আবিস্কার করলুম সিরিং খুব ভালো গল্পও করতে পারে। ‘ছাং’ হাতে করে বসে ক্যাম্প ফায়ারের নিভু নিভু হলদে আলোয় চাদর মুড়ি দিয়ে বসে চেরা চোখ যতটা সম্ভব বড় করে হাত পা নেড়ে সে কি বর্ণনা! শুনলুম না কি এখানে ‘ইয়েটি’ পাওয়া যায়! “উ কেয়া বড়া বড়া সাব! পুরা সফেদ। সির্ফ মুহ কালা সাব। লম্বে লম্বে হাথ। পাও ইতনা বড়া হায় কে পুরা ঘর তোড় সকে। আঁখমে সোলা হায় সাব। আপ অগর দেখে তো ভি বিসোয়াস না করে”। তাকে জিজ্ঞেস করা হল যে সে নিজে দেখেছে কি না। নাকি ‘গুল’ মারছে। শুনে সিরিং রেগে আগুন। উঠেই পড়ল। দূর আঙ্গুল দেখিয়ে বলল যে ঐ নদীর ওপারে ‘ওনারা’ নাকি প্রায়ই আসেন। ‘চাঁদনি’ রাতে খালি দেখা যায় তাও যদি কপাল ভালো হয় তো। তারপর আরো কিছু কথা বলে বিদায় নিল। পাসেই গাঁওতে থাকে। প্রায় এগারোটা বেজে গেছিল আমরাও উঠে পড়লাম। একটু ঘুমোতে হবে।
শুয়ে আছি। ঘুম আর আসে না। জানলা দিয়ে চাঁদের আলো এসে চোখে পড়ছে। বন্ধ করে দিলে ভেতরে গুমোট। খানিক এপাশ ওপাশ করে ‘ধুত্তোর’ বলে উঠেই পড়লাম। এর চেয়ে বাইরে নদীর ধারে গিয়ে বসা ভালো। দরজা খুলে বেড়িয়ে এলাম। ফুট চল্লিশেক মত চওড়া উঠোন সামনে। তারপরেই নদী। ঘড়ি জানালো যে এখন রাত সাড়ে বারোটা। জলের আওয়াজ খুব বেশি করে কানে আসছে। সারাদিনে অন্য আওয়াজে ঢাকা পড়েছিল। দেখি আরেক বন্ধুও আগে থেকেই এসে বসে আছে নদীর পারে। আমি যেতেই ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করে বসতে বলল। বড় করে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। চারিদিকে আবছা আঁধারি আলোয় মায়াবী পরিবেশ। নদী্র জল যেন রূপোলী চাদর। চারিদিকে অখণ্ড শান্তি। জলের কুলকুল আওয়াজ সাথে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর মাঝে মাঝে নাম না জানা রাতপাখির চিৎকার। এছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। যেন পার্থিব জগতের সীমানা ছাড়িয়ে অন্য কোনো জগতে চলে এসেছি। আকাশে থেকে থেকে ছেঁড়া মেঘের আনাগোনা। চাঁদ কখনো সখনো ঢাকা পড়ছিল। নদীর ওপার থেকে জঙ্গল শুরু। সেখানে বড় বড় পাইন গাছ গুলো যেন সেই প্রাগৈতাহাসিক যুগ থেকে একই রকম ভাবে বনের প্রতিভু। দুজনে বসেছিলাম কতক্ষণ ঠিক মনে নেই। সময় যন্ত্রটার দিকে তাকাতেই ইচ্ছে করছিল না। এ এক অদ্ভুত ভালোলাগার অনুভুতি। কেউ কারুর সঙ্গে কথা বলছিলাম না। পাছে রসভঙ্গ হয়। আসলে ইচ্ছেই করছিল না।
হঠাত আমারই খেয়াল হল। গায়ে রীতিমত কাঁটা দিয়ে উঠল। বন্ধুকে ঠেলা দিলাম, “এই সামনে দেখতে পাচ্ছিস?” বন্ধু ঘাড় ঘোরাল আর আমারই মতন চমকে গেল। “সত্যি”! নদী পেরিয়েই জঙ্গলের ভেতর বড় পাইন গাছের পাসে আবছা ছায়ার মত ‘কিছু একটা’ দাঁড়িয়ে আছে। বিরাট মানুষের মত চেহারা। লম্বায় প্রায় ফুট বিশেক হবে। মাথাটা ঈষৎ চাপা। চওড়া বুকের ছাতি একটা হাত দিয়ে গাছটাকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আরেকটা হাত দেখা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে দুলছে। আমরা হাঁ করে তাকিয়ে ছিলাম। এই তাহলে ‘ইয়েতি’! মনে পড়ল, সিরিং বলেছিল যে চাঁদনি রাতেই ‘ওনা’দের দেখা যায় তাও কপাল ভালো থাকে তো। কিন্তু এতো কাছ থেকে ‘এনা’কে দেখে মোটেই ‘কপাল ভালো’ বলে খুশি হতে পারলাম না। যা চেহারা তাতে গোটা তিন চারেক লাফ দিলেই আমাদের হাতের নাগালে পেয়ে যাবে। তারপর কি হবে! মানে আমাদের দিয়ে কি কি রান্না হতে পারে সেই সব মাথায় আসছিল। মুড়ো দিয়ে মুড়িঘণ্ট করবে না কি সোজাসুজি সিক-কাবাব বানাবে কে জানে! ভুত দেখলে কার যেন নাম নিতে হয়। কিছুতেই মনে পড়ছে না। জানকী দেবী ঐ যাকে বিয়ে করেছিলেন! আরে লক্ষণের দাদা সেই নীলচে রঙের ছোকরার কি যেন নাম? কিন্তু ইয়েতি কি ভুত? যাচ্চলে, পৈতেটা যে কোথায় গেল! সোয়াটার গেঞ্জির জঞ্জালে সে ভদ্রলোক যে কোথায় মুখ লুকোলেন খুঁজেই পেলাম না। আমি আরেকবার ভালো করে তাকালাম। কৈ কোথায় ইয়েতি! আর নেই তো! এই রে আসপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলুম। লাফটাফ মেরে কাছ চলে আসে নি তো! ওদিকে দেখি বন্ধু মিটিমিটি হাসছে। বললুম, “হাসছিস কেন?” সে বলল, “ভাল করে তাকা বুঝতে পারবি”। ফের একবার তাকালুম। দেখি ইয়েতি আবার ফিরে এসেছে। সেই পাইন গাছটাতেই হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। মজাটা এইবার বুঝতে পারলাম। আরেকটা ছোটো পাইন গাছ ডালপালা নিয়ে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে যে অবিকল একটা মানুষের মত লাগছে আলো-আঁধারিতে। খুব উন্নতমানের দৃষ্টিবিভ্রম। সোজা বাঙ্গলায় বললে ‘হ্যালুসিনেসন’। এই মায়াবী আলোয় সাধারন বস্তুর রূপ পাল্টে অসাধারন হয়ে যায়। স্থানীয় মানুষের আর দোষ কি! তারা সরল বিশ্বাসে এই গুলোকেই মেনে নেয়। তবে রহস্যটা আবিস্কার করে কিন্তু মনটা খারাপই হয়ে গেল। এতক্ষণের রোমাঞ্চটা মাঠে মারা গেল। তারপর অনেকবার সেদিকে তাকিয়েও কিছুতেই আর ইয়েতিটাকে দেখতে পেলাম না।
পরেরদিন সিরিং-এর সাথে দেখা হলই না প্রায়। পাহাড়ি লোক। তার সরল বিশ্বাসে আগেরদিন সন্দেহ প্রকাশ করায় দেখি এখনো রেগে আছে। মুখ গোঁজ করে আমাদেরর মালপত্র আবার গাড়িতে তুলে দিয়ে চলে গেল। বেচারাকে কিছু বকসিস দিতে হয়। ডাকলাম কিন্তু সে পাত্তাই দিল না। হোম-স্টে’র মালকিন তখন বললেন, “উসে কুছ ভি রুপেয়া মত দো। অগর উসে কুছ ভি পয়সা মিল গয়া তো ‘পিকে’ পড়া রহেগা। কাম করবে না”। আমরা বললাম তা কি করে হয়। বেচারা এতো করল আমাদের জন্য। তখন ভদ্রমহিলা বললেন যে হাতে পয়সা এলেই সিরিং দারুর আড্ডায় সব উড়িয়ে দেয়। শুধু নিজে খায় না। ইয়ার-বকসি সবাইকে নিয়ে হুল্লোড় করে। ওদিকে ঘরে ‘লঙ্কা আনতে মোমো ফুরোয়’। তাই সিরিংকে কোনো পয়সা হাতে দেওয়া হয় না। ওর ‘ঘরওয়ালি’ এসে মাইনে নিয়ে যায়। আমাদের যদি একান্তই কিছু দেওয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে যেন ওনাকেই দিয়ে যাই উনি রাতের দিক করে সিরিং-এর হাতে দিয়ে দেবেন। তাই করতে হল শেষ পর্যন্ত। রোদ বাড়ছিল। রাতের সেই গাছ দুটোর দিকে তাকিয়ে দেখি তারা যেন আমাদের বিদায় জানাচ্ছে। বিদায় ইয়েতি। বিদায় ঋষিখোলা।
এসব প্রায় বছর সাতেক আগের কথা। তারপর কতবার পাহাড়ে গেছি। রাস্তা অনেক ভালো হয়েছে। হোম-স্টেগুলো অনেক বেশি প্রফেসনাল হয়েছে। তাদের ব্যবস্থাপনা ভালো হয়েছে। জানি না চাঁদনি রাতে আর ইয়েতি দেখতে পাওয়া যায় কি না। সেবাস্তিয়ান জি কিছুদিন আগে কোলকাতা এসেছিলেন। আড্ডা মারার ফাঁকে জানতে পারলাম সিরিং কিছুদিন হল ইয়েতির দেশেই চলে গেছে। দারু বেচারার আর সহ্য হয় নি।

-শুভঙ্কর ব্যানার্জি-

শেয়ার করুন
Brush

আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ