আপনার ভাষা নির্বাচন করুন
মধ্য আন্দামান দ্বীপের বারাট্যাংয়ে রয়েছে এক লাইমস্টোন কেভ। জলপথে সমুদ্রের খাঁড়ির মধ্যে দিয়ে চলে, ম্যানগ্রোভের জঙ্গল পেরিয়ে পৌঁছতে হবে সে গুহায়।
পোর্ট ব্লেয়ার থেকে সেই ভোররাতে বেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই পৌঁছে গেলাম ৫০ কিমি দূরের জিরাকট্যাংয়ে (Jiraktang)। এখান থেকে এন্ট্রি করে পুলিশি প্রহরায় জারোয়া রিজার্ভ ফরেস্টে প্রবেশ। জঙ্গলের বুক চিড়ে চলেছে আন্দামান ট্রাঙ্ক রোড। দক্ষিণ আন্দামান থেকে মধ্য হয়ে উত্তর আন্দামানের সংযোগকারী এই রাস্তা। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হালকা পাহাড়ি পাকদন্ডী পথ। পথের পাশে বার চারেক সাক্ষাৎ হল জারোয়াদের সাথে। দেশের এক অতি প্রাচীন ও রহস্যময় জনজাতি জারোয়ারা আজও সভ্য সমাজের অংশ নয়। অনেকেই জানেন এই জঙ্গলে নামা বা জারোয়াদের ছবি তোলা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। জঙ্গলের শেষে দক্ষিণ আন্দামান দ্বীপ ও রাস্তারও শেষ। সামনে দুই দ্বীপের মাঝে বিশাল চওড়া খাঁড়ি ‘মিডল স্ট্রেইট’ (Middle Strait)। প্রকান্ড ভেসেলে চড়ে বাস, গাড়ি সহ খাঁড়ি পার হয়ে ওপারে মিডল আন্দামান (Middle Andaman) দ্বীপের ‘বারাট্যাং’ (Baratang)।
আন্দামানে আসা থেকেই লাগাতার ঝড় বৃষ্টিতে সমস্ত রকম জলপথ পরিবহন বন্ধ হয়ে পড়েছিল। বারাট্যাংয়ে পৌঁছনোর পথে নীলাকাশ দেখে মনটা খুশি হয়েছিল। বারাট্যাংয়ে পৌঁছে আরো খুশি হলাম জেনে যে এই মাত্র প্রশাসনিক নির্দেশে চালু হয়েছে স্পিড বোট পরিসেবা, যাতে চড়েই যেতে হবে লাইমস্টোন গুহা দেখতে। টিকিট কেটে, লাইফ জ্যাকেট পরে, স্পিড বোটে চড়ে ভেসে পড়লাম। খাঁড়ির জল কেটে সশব্দে এগিয়ে চলল স্পিড বোট। মেঘেদের বিদায় জানিয়ে মাথার উপর নীলাকাশ। দুপাশে ঘন সবুজ ম্যানগ্রোভ অরণ্য। একই সাথে মনোরম ও রোমাঞ্চকর এই জলযাত্রা। কোথাও কোথাও ম্যানগ্রোভের গাছগুলি একেবারে নুইয়ে পড়েছে জলের উপর। কোথাও বা সরু খাঁড়ি ঢুকে গেছে জঙ্গলের ভিতরে। খানিকটা সুন্দরবন বা ভিতরকনিকার ম্যানগ্রোভময় খাঁড়ির মতই। মিনিট কুড়ি জলবিহারের পর পাড়ে এক জায়গায় থামল স্পিড বোট। এখান থেকে দেড় কিমি হাঁটা পথ গুহার। পথ গিয়েছে প্রথমে খানিক জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। দুপাশে সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া গাছ ও তাদের মাটির উপর উঠে থাকা শ্বাসমূল। জলের উপর জায়গায় জায়গায় বাঁশের সাঁকো পেরনো। জঙ্গলের পর পথের একপাশে সবুজ মাঠ ও গ্রাম। সবশেষে খানিক পাথুরে চড়াই উতরাই পথ পেরিয়ে পোঁছলাম চুনাপাথরের গুহায়।
স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাকমাইটের গুহা। বোটে আমাদের সাথে আসা একটি ছেলেই আমাদের গাইড। তার হাতের ব্যাটারি লাইটের সাহায্যে অন্ধকার গুহায় প্রবেশ। চুনাপাথরের উপর জল পরে গুহার ভিতরে তোইরি হয়েছে নানান প্রাকৃতিক ভাস্কর্য। যা মানুষের ইমাজিনেশনের সাথে মিশে নানান রূপ পেয়েছে। হাতির মাথা, গণেশের মূর্তি, নানা দেবদেবীর মূর্তি – প্রভৃতি নানা রূপ। এরকম গুহা ভারতে আরো অনেক আছে। আগে দেখা অন্ধ্রের বোরাগুহা ও মেঘালয়ের মৌসমাই কেভের তুলনায় বারাট্যাংয়ের গুহা আয়তনে ছোট। তবে আন্দামানে এসে এরকম পরিবেশে এমন গুহা দর্শন উপরি পাওনা। সেই সাথে এখানে পৌঁছানোর যাত্রাপথটিও অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
-শুভাংশু দাশগুপ্ত-