আপনার ভাষা নির্বাচন করুন
দেওদার, ওক, নাসপাতি , খুবানি,গাছে ছাওয়া ১৭০০ মিঃ উচ্চতায় ছোট্ট একটা পাহাড়ি গ্রাম। নাম খির্সু ।তুষারশৃঙ্গের দৃশ্য আর নৈঃশব্দের যুগল বন্দী। খির্সুতে ঢোকার কয়েক কিলোমিটার আগে থেকে পথের দুপাশে প্রকৃতি জানান দেয় আমরা হিমালয়ের এক নিভৃত অঞ্চলে প্রবেশ করেছি। গাড়ি এসে থামল গাড়োয়াল মন্ডল বিকাশ নিগমের পর্যটক আবাসের প্রাঙ্গণে। সামনেই দেখা যাচ্ছে হিমালয়ের চির তুষারাবৃত শৃঙ্গমালা।
দুপুরের খাওয়ার পর পর্যটক আবাসের লনে যখন বসা হল তখন মাধ্যন্দিন সূর্যের আলো বরফাবৃত পাহাড়ে পড়ে পারার মতো টলটল করছে। দিগন্ত জুড়ে নীলে সাদায় মেশানো এক স্বর্গীয় প্রভা বরফের শিখররাজির ওপর বিরাজ করছে। কিন্তু হায় অমন রূপে হুঁশ নেই বেশ ক’জন পর্যটকের’।তারা লনে বসে জমিয়ে তাস খেলায় ব্যস্ত। “তোমরা কথা হেথা কেহ তো বলে না, করে শুধু মিছে কোলাহল।” খির্সুর কলেজ ও স্কুল এর পাশে খেলার মাঠ। তার পাশে ঘন্টাকর্ণ মন্দির ।সেখান থেকে দেখা যায় প্রায় সাড়ে 23 হাজার ফিট উঁচু চিরতুষারাবৃত চৌখাম্বা পর্বত শিখর গ্রিক দেবতা জিউসের মত তার সুনীল স্বর্গের রাজ্য থেকে খির্সু গ্রামকে অবলোকন করছেন। বিকালে আসা হল বনদপ্তরের বাগানে আপেল, নাশপাতি, খুবানি, কাফল ,তুর, বার্চ ,দেওদার প্রভৃতি গাছের সমাবেশ সেখানে।
গাছের ফাঁক দিয়ে কখনো চৌখাম্বা কখনো কেদারনাথ বা সুমেরু পর্বত শিখর উঁকি দেয়।বাগানের চারপাশ দিয়ে পায়ে চলার পথ। মাঝে মাঝে বসার জন্য টিনের শেড দেওয়া ফুল গাছে ছাওয়া সুন্দর সব বসার জায়গা। এরকম একটি জায়গা খুঁজে বসে পড়ি। পৃথিবীর বোধ হয় সর্বত্র ভোরের আলো ফোটার আর ঠিক সন্ধ্যের আগের সময়টা পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে। চুপ করে বসে বসে দেখি কত সব অপরূপ নানা প্রকৃতির হিমালয়ের পাখি বাসায় ফিরে আসছে। চৌখাম্বার ললাটে লেগেছে অস্ত সূর্যের আলোর ছোঁয়া। পরের দিন ভোর বেলায় যখন পর্যটক আবাস এর প্রাঙ্গণে এসে দাঁড়ালাম তখন আলো ফোটার আবেগে আকাশের নিস্তব্ধতা যেন থর থর করে কাঁপছে ।তারপর সবিতার আলো ছড়িয়ে যায় পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায়। চৌখাম্বা,সুমেরু,কেদারনাথ ,গঙ্গোত্রী প্রভৃতি শিখরের চূড়ায় চূড়ায় ধেয়ে চলে আলোর ঢেউ ।আকাশে বাতাসে সানু থেকে সানুতে ছড়িয়ে পড়ে সবিতার আলো ।উত্তরাঞ্চলের জেলাসদর পৌড়ি থেকে মাত্র 19 কিলোমিটার দূরে খির্সু।হরিদ্বার থেকে বাসে বা গাড়িতে পৌড়ি হয়ে খির্সু যাওয়া যায়। যারা হিমালয়ের বিশালতার মাঝে পরম নিস্তব্ধতার গহনে অবগাহন করতে চান তারাই শুধু এখানে আসবেন।
-প্রসূন কান্তি পাল-