আপনার ভাষা নির্বাচন করুন
মাস ছয়েক আগে সাইমন আমায় বলে “চলিয়ে দাজু আপ কো নেপাল ট্রিপ করাতে হ্যায়”।। এই কথা শুনে না বলা বিলাসিতা মাত্র।।।সাইমন এর পরিবারের সাথে আরও বেশ কিছু পাহাড়ি পরিবার নিয়ে শুরু আমাদের নেপাল ভ্রমণ।।।
আমরা পশুপতি দিয়ে ঢুকে কাঁকড়ভিটা দিয়ে নেপালে এসেছি।।।নেপালের রাস্তা নিয়ে কিছু বলার নেই একদম মাখন।।।গাড়ী র পারমিটেই প্রায় বেশ কিছু সময় চলে যাওয়াতে আমরা পোখরা ঢুকি প্রায় রাত দেড় টায়।।।কিন্তু Orchid hotel এর Managemant এত ভাল যে, আমাদের কোন অসুবিধে হয়নি।।।নেপালের ১৬ টাকায় আমাদের ১০ টাকা কিন্তু খাওয়ার সহ সব জিনিসের এত দাম যে কোনও সুবিধাই পাওয়া যায় না।।।রাতে পথের ক্লান্তি মারাত্মক ছিল, কিন্তু ভোরে হোটেলের এর জানালা বেয়ে Mt Annapurna দেখে সব ক্লান্তি এক লহমায় ধুয়ে মুছে সাফ।।।
দূরন্ত ব্রেকফাস্ট করে আজকের গন্তব্য সরঙ কোট।।। সরংকোট থেকে Mt Annapurna আহা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।। হোটেল মালিক Bijaya Karki আমাদের সাথেই ছিলেন।।তিনি ই আমাদের মনে আগুন লাগিয়ে বলেন ” স্যার চলিয়ে পারাগ্লাইডিং করতে হ্যায়”, উচ্চতা ভয়ে কোনও দিন ভাবিও নি যে এসব করতে পারব কিন্তু করেছি, কি বলব অসাধারণ অভিজ্ঞতা।।। “Open Sky ” সেরা Oraganisation Paragliding এর জন্য।।। ৬০০০-৭০০০ খরচ / মাথা।।।
পোখরা র ফেওয়া তাল লেকের চারধারে অজস্র রেস্তোরাঁ, কোথাও গিটার তো কোথাও বাঁশি,অদ্ভুত এক পরিবেশ,রাস্তা ঘাট ঝকঝকে,এক টাও প্লাস্টিক নেই,রাতেও রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো ভীষন সেফ।।।একটা ছোট্ট ইউরোপ যেন এই পোখারা।।।লেকে সান সেট যেন হেভেনলি।।। Pork,Buff,Mutton যারা ভালবাসেন তাদের স্বর্গ রাজ্য নেপাল।।।নেপালের বিখ্যাত হুইস্কি “Old darbar”, 2150-2400 জায়গা ভেদে।।। বুঝতেই পারছেন কেন দুটো একসাথে উত্থাপন করেছি।।।
পোখারা র থেকে ভোরে বিদায় নিয়েছি,চলেছি মুস্তাং এর পথে।।।বেনী র পরে রাস্তা যেন আর চলতেই চায় না।।ধুলো আর বোল্ডার ফেলা রাস্তা যেন সেই পুরানো সান্দাকফু।। ১০ কিমি / ঘন্টার বেশি গতি অসম্ভব৷। আমাদের এই ট্রিপ এর জন্য অন্য গাড়ী ভাড়া নিতে হয়েছিল।। দুদিনের জন্য ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২৫০০০/ গাড়ী।। যদিও মুস্তাং না গেলে দিন প্রতি ৫-৬ হাজার এ গাড়ি পেতে পারেন কিন্তু মুস্তাং এ অসম্ভব৷।।
মুস্তাং এক স্বপ্নের জায়গা।।টিবেটান প্লেটো যাকে বলে৷। রাস্টিক এক অনুভুতি।।। কাগবেনী,মারফা সহ ছোট ছোট গ্রাম, তীব্বতী সহ নেপালী দের বসবাস।।ডিসেম্বরের মাইনাস আবহে সাথে তীব্র বাতাসের গতিবেগ আহা Cold Desert যাকে বলে।।।যমসম হল সদর শহর, যেখান থেকে মুস্তাং ঘুরে নেওয়া যায়৷ এখানের দুটি সেরা হোটেল Om’s home আর Hotel Majesty…mustang এর সেরা অবস্থান মুক্তিনাথ মন্দির।।।প্রায় ৪০০০ মিটার উচ্চতায় প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য যাকে বলে।।।কালীগন্ডকী নদীর উপত্যকার দৃশ্য মনে বসত করে থাকতে পারে চিরদিন৷।।
মুস্তং থেকে যাওয়া এবং ফেরার পথে একটা দিন তাতোপানী এবং একটা দিন কালোপানী তে না কাটালে মুস্তাং ট্যুর টাই বৃথা, বিশেষ করে কালোপানী, আহা নীলগিরিআর ধৌলাগিরি কে দুপাশে নিয়ে এক সাজানো গোছানো উপত্যকা।। যেদিকেই চোখ যাবে স্নো পিক,যেন চাইলেই ছোঁয়া যায়।।।
মুস্তাং থেকে আমাদের গন্তব্য ছিল Chitwan national park…নেপাল এর এই জাতীয় উদ্যান খুব বিখ্যাত, রাপ্তি নদীর তীরে বসে হাতীর স্নান,কুমীর, এলিগেটর দের রোদ পোহানো দেখেই সময় বয়ে যাবে, সাথে হুইস্কি বা ওয়াইন বা ঠান্ডা পানীয় আর Buff, Pork kabab…অদ্ভুত এক পরিবেশ এই চিতওয়ান এর রাপ্তি নদীর ধারে।।।
এবার আসি কিভাবে কম খরচে ঘুরতে পারেন আর থাকার সেরা ঠিকানা য়।।।
প্রথমত বলে রাখি কাঁকড়ভিটা গেট কিন্তু রাত দশ টাই বন্ধ হয় ফলে গাড়ী নিয়ে গেলে তার আগেই বেরিয়ে আসবেন।।।এই সময় কিন্তু যখন তখন চেঞ্জ হয়।।।আর নেপালে কিন্তু ভারতীয় ১০০ টাকার নোট ছাড়া সব নোট নিষিদ্ধ।। এটিএম থেকে তুললে ২০০০০ টাকায় ৫০০ টাকা কেটে নেয়।।।
এবার আসি প্ল্যান এ।।।
আপনি কাঠমান্ডু সরাসরি আসতে পারেন ফ্লাইটে সেক্ষেত্রে কাঠমান্ডু দুদিন কাটিয়ে তারপর গাড়ি তে পোখারা দুদিন, মুস্তাং তিন থেকে দুদিন, আর চিতওয়ান এর জন্য দুদিন কমপক্ষে৷ যদি বাসে যান কাঁকড়ভিটা থেকে রাতে বাস ধরে পোখারা যেতে পারেন, আবার পোখারা থেকেও যমশম বাসে যেতে পারেন কিন্তু বাসে খুব খুব কষ্ট।।। পোখারা অবধি তাও ঠিক আছে, মুস্তাং বাসে একদম না,রাস্তা হচ্ছে, বছর দুয়েক বাদে যান৷।।নেপাল সত্যি ই যদি যান, পয়সা জমিয়ে যান, প্যাকেজ ট্যুরে নেপাল যাওয়ার থেকে না যাওয়াই ভাল৷।।।।। একদম কাঁকাড়ভিটা টু কাঁকরভিটা গাড়ী হলে সফর টা ভাল হবে।।