আপনার ভাষা নির্বাচন করুন
আচ্ছা, আমি কার পাকা ধানে রোলার দিয়েছি বলুন তো? যদি আমার এই শর্ট পাহাড়ি জীবনে, কোনও নারী আসে লাজুক চরণে, চড়া মেকআপ বরণে, জর্জেট শাড়ি পরনে, মাধুরি দীক্ষিত ধরনে, তাহলে আপনার মন রেলগাড়ির চেয়েও লম্বা কুউউউউ ডাকছে কেন? প্রেম কি বাপ, ভয়ঙ্কর পাপ? সায়ানাইডের সিরাপ? আমি জেনে শুনে পয়জন, করিচি আপন?
কিন্তু পাহাড়ে গেলে তো প্রেম পাবেই। বিশেষত গৈরিবাসের মতো জায়গায়। ৮৬০০ ফুট ওপরের উপত্যকার কোলে একটাই মাত্র আশিয়ানা। যেখানে ভোরের স্বপ্ন ভাঙে আরেক স্বপ্নরাজ্যে। বাইরে তখন বৃক্ষে বৃক্ষে, জলে স্থলে অন্তরীক্ষে কাঁচা সোনার মতো সূর্যালোক, অচেনা শত পাখির কলগীতি, সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো ঘন সবুজ পাহাড়, সেখান থেকে মেঘপরীরা উড়ে এসে চকিত চুমুতে ভিজিয়ে যায় আপনার গাল, ঠোঁট ; চরাচরব্যাপী নৈঃশব্দ্যের মাঝে নেমে আসে একান্ত আদুরে রাত; পেলব নিশ্চুপ শিশিরকণারা ভালোবেসে গা এলিয়ে দেয় নরম সবুজ ঘাসের বিছানায়।
এখানেও যদি প্রেম না পায়, যদি শহুরে পেটরোগা সত্তাটা ১০ ফুট বাই ১০ ফুট মার্বেল সাম্রাজ্যে বসে স্টার জলসার কূটকচালি আর ষড়যন্ত্রে বেশি স্বস্তি পায় (হোক আমার পুরনো কর্মক্ষেত্র, হে সেলুকাস তবু এ সত্য); যদি প্রকৃতির শতবর্ণে উদ্ভাসিত অদেখা মহামহিম রূপের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় অনুব্রত মন্ডলের কোটেশান কিম্বা দু’সের পটলে দেড় টাকা বেশি দিতে হচ্ছে বলে ফুটপাতে ঝাড়া দেড় ঘন্টার মহাযুদ্ধ, সোশ্যাল মিডিয়াতে হাড়ভাঙা চর্বিতচর্বণ অথবা হৃদয় যদি বিবেচিত হয় মোস্ট ওভাররেটেড অর্গান হিশেবে…… , তবে অরে রে অনড্ডবান, অই লইয়া থাক।
তাই যে যাই বলুক, টেঁসে যাবার আগে এক চুমুকে পান করে নেবো পবিত্র প্রেম, অবৈধ কামনা, জাঁকালো জোকস, মাথা হেঁট বিষণ্ণতার রঙিন শরবত। তাতে মিশিয়ে নেবো এক আকাশ ভেজা মেঘ, শিরশিরানো তাজা অক্সিজেন, অগোছালো চুলের সুগন্ধী মাদকতা, না বলা কোনও নিষিদ্ধ কথা, আবেশবিভোর নিরবতা। চুষে নেবো ফুলের বোঁটা থেকে মধু’র ফোঁটা, ধরবো এলোমেলো ছুটে চলা তিরতিরে ঝরনার হাতটা, মেখে নেবো হীরের কুচির মতো নির্জনতা।
দেখে বেশ লাগলো, নির্জন এই পাহাড়গুলিতে অধিকাংশ দোকান/হোটেল চালায় মেয়েরা। হাসিখুশি। প্রকৃতির মতোই উচ্ছল। GTA-র এই কটেজটির মালকিনও একটি কমবয়সী মেয়ে। নাম প্রমীলা। ইলেক্ট্রিসিটি নেই। সোলার ব্যাটারির সামান্য বিদ্যুতে একটা-দুটো আলো জ্বলে শুধু। তাতে আরও বেশি উজ্জ্বল, আকাশ ভরা ঝাঁকে ঝাঁকে তারা। মাঝে মাঝে শীতল বাতাসে অজানা শব্দ। একটু দূরে সীমা সুরক্ষা বাহিনীর ক্যাম্প। ৮টায় গরমাগরম খাওয়া সেরে ৯টায় ঘুম। পাখির ছবিশিকারীরা ভোর থেকে ক্যামেরায় তাগড়াই লেন্স আর দমবন্ধ সাইলেন্স নিয়ে থাবা পেতে আছে। আমরাও আমাদের লেন্সগুলি রেডি করে, তুমুল অক্সিজেন বুকে ভরে, পা বাড়ালাম ১২ কিলোমিটার দূরে, পশ্চিমবঙ্গের উচ্চতম পয়েন্ট সান্দাকফুর দিকে।
-অর্পন কুমার শর্মা-