আপনার ভাষা নির্বাচন করুন
সবুজের মাঝে নিজেকে আবিষ্কার করার এক অকৃত্রিম আনন্দ আছে।যা পার্থিব সুখের থেকে স্বর্গীয় স্তরে নিয়ে যায়।এমন ই এক নির্জন সবুজের আস্তানা ঝাড়গ্রাম জেলার বেল পাহাড়ী। ঝাড়গ্রাম রেল ষ্টেশন থেকে প্রায় ৭০ কিমি দূরত্ব।বেলপাহাড়ি বর্ননা দিতে গেলে প্রথমে বলতে হয়। সবুজের মাঝে এক অখন্ড নির্জনতা।ব্যাস আর কিছু বলার নেই বেলপাহাড়ী নিয়ে বাকিটা জানতে আপনাকে আসতেই হবে!
ছোট ছোট পাথুরে টিলা আর শাল,কেন্দু, মহুয়ার ঘন বন।এই বনেই কাঠ সংগ্রহ করে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে এখানে আদিবাসী মানুষ জন। মূলত সাঁওতাল,শব্বর,লোধা,ভূমিজ প্রভৃতি জনজাতির বাস এখানে।ছোট ছোট টিলা,পাহাড়, ঝর্ণা,বড় বড় জলাশয় এই নিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই বেলপাহাড়ী।একসাথে এতকিছু পাওয়া একজন প্রকৃতিপ্রেমিক এর কাছে আর কি চাই।এই অপরূপ প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজ এখোনো পর্যটক রা সেভাবে পাইনি তাই হয় তো বেলপাহাড়ীতার নিজেস্বতা নিয়ে অকৃত্রিম ভাবে সাজিয়ে তুলেছে নিজেকে।
এখানে জনজাতির প্রধান জীবিকা বলতে কৃষি কাজ,তাও সব ঋতুতে হয়না তাই এইসব মানুষ গুলোর জীবিকার জন্য নানা দিকে ছুটতে হয়। প্রত্যেকের বাড়িতে গরু ছাগল আছে তা মাঠে ঘাটে চড়িয়ে বড় করে বিক্রি করে,এছাড়া আছে বাবুই ঘাস থেকে দড়ি বানানো তা গ্রামিন হাটে বিক্রি করা। বনের কাঠ সংগ্রহ এছাড়া মহুলের সময় মহুল ফল সংগ্রহ করে তার শুকিয়ে হাটে বিক্রি করে যা থেকে মদ তৈরি হয়।নিজেরও এই মহুল মদ তৈরি করে হাটে হাটে বিক্রি করে। খুব কষ্ট করে জীবন নির্বাহ করে এরা পিঁপড়ের চাটনি দিয়ে ভাত খায়,নয়তো শাক পাতা সেদ্ধ।
পাহাড়ের কোলে পাথর আর মাটি দিয়ে গাঁথা বাড়িগুলো সুন্দর করে রঙ করে সাজানো যেন ছবির মত।যেতে যেতে মাঠের মাঝে ষাঁড় দিয়ে জমি চাষের ছবির দেখতে পাবেন। ছোট ছোট মাটির ঘরগুলোর পাশে ছাগল মুরগী চড়ে বেড়ায় যা দেখতে দেখতে গ্রামের সহজ সরল জীবন যাপনের প্রতি মন পড়ে যাবে।এর সাথে আছে গ্রামীণ হাট যেগুলো সপ্তাহে একদিন বা দুদিন বসে। সেই হাটে দুতিনটি গ্রামের মানুষ আসলে কেনা বেচা করতে।
বর্ষা কালে সবুজ প্রকৃতিকে অনুভব করার জন্য বেলপাহাড়ীর জুড়ি মেলা ভার।যদিও এই সময় বেশি টুরিষ্ট যায়না।এখানে হোটেল নেই ।প্রকৃতি এখানে নিজের মত করেই সেজে থাকে। বর্ষার জল পেয়ে সবুজ শাল,মহুয়ার গাছ তখন আকাশ ছুঁতে চায়।আর তার তলায় বাবুই ঘাসের মখমলী গালিচা পাতা।নীল আকাশ পাশে ছোট বড় পাহাড়,মাঝ বরাবর চলে গেছে কালো পিচের রাস্তা।আদিগন্ত সবুজের মাঝে নিজেকে আবিষ্কার করার এক অপূর্ব অবকাশ।মাঝে মাঝে জঙ্গলের মধ্যে ছোট ছোট কিছু মাটির বাড়ি আর সবুজ ধূ ধূ মাঠ আর নীল আকাশ কে পিছনে ফেলে আমরা এগিয়ে যাওয়া। বৃষ্টির ধারা মাঝে মাঝে আরো অপরূপ করে তুলবে আপনার জার্নি টাকে।
আর একটু গেলেই ককড়াঝোড়। জঙ্গলে ভরা পাহাড়ী পথ পুলিশ ক্যাম্প পেড়লেই একরাশ স্তব্ধতা। কাঁকড়াঝোরে বৃটস্পতিবার হাট বসে।গ্রামীন হাটটি দারুন সুন্দর ঠিক যেন ছবির মত।আর আছে আম ঝর্ণা,কেতকী ঝর্ণা। রাস্তা পাশে আমলাসোল।লাল জল নামক কূপ।ঘঘরা জলপ্রপাত বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে পাথুরে টিলা আর পাশদিয়ে জলপ্রপাত। আর আছে ময়ূর ঝর্ণা এই সব নিয়ে একটা বর্ষায় উইকেন্ড ট্যুরের জন্য সবুজ ঘেরা বর্ষা মঙ্গল উৎসব এই বেলপাহাড়ী!
বেলপাহাড়ী তে জঙ্গলে থাকার কোনো জায়গা নেই আপনাকে বেলপাহাড়ীতে হোটেল বা সরকারী বাংলোয় থাকতে হবে।
হাওড়া থেকে প্রচুর লোকাল, এক্সপ্রেস ও পেসেঞ্জার ট্রেন আছে ঝাড়গ্রাম যাবার। ঝাড়গ্রাম থেকে বাসে বা প্রাইভেট গাড়িতে বেলপাহাড়ি আসতে হয়।ওখান থেকে ট্রেকার বা গাড়ি ভাড়া করে আপনাকে জঙ্গল ঝর্না এবং আদিবাসী গ্রাম গুলো দেখতে হবে।