রবি ঠাকুরের শ্রীভূমির পথে পথে


প্রকৃতি সবার মন কে প্রফুল্ল করে। যাপিত জীবনের সব ক্লান্তি ভুলতেই আমরা প্রকৃতির কাছে ছুটে যাই। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আর হযরত শাহজালাল,শাহপরান এর লীলা ভূমি, অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ সিলেট। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই প্রাচীন জনপদ। বনজ, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও সিলেটের রয়েছে প্রসিদ্ধ ইতিহাস। সিলেটে বসবাসকারি বিভিন্ন আদিবাসীদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি। চা বাগান, জাফলং, রাতারগুল জলাবন, হাকালুকি হাওর, লালাখাল, ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, তামাবিল, পাহাড়, ঝর্ণা সব মিলিয়ে নানা বৈচিত্রের সম্ভার এই সিলেট দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী। সিলেটে আসলেই অন্যরকম এক অনুভূতির জন্ম নেয়।

আজকের আমাদের ভ্রমণ গন্তব্য শ্রীভূমি সিলেট। ১৯১৯ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেট এসেছিলেন। সিলেটে থেকেও ছিলেন তিনটি দিন। সিলেটের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে লেখেছিলেন ” সুন্দরী শ্রীভূমি”। সেই সুন্দরী শ্রীভূমির পথে আজ আমরা। ঢাকায় নেমে আমরা অপেক্ষা করছিলাম বাসের। গ্রীনলাইন পরিবহনের রাজারবাগ কাউন্টারে বসা আমরা। বাস ছাড়ার মিনিট পাঁচ আগেই বাসে উঠে প্রস্তুতি যাত্রার। সময় মতোই বাস ছাড়লো। শেষ বিকেলের সোনালী রোদকে পেছনে ফেলে আমরা এগিয়ে চলছি সিলেটের দিকে। ঢাকার বিখ্যাত যানজট তেমন আজ পেল না আমাদের। সৌমেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের আতিথিয়েতায় ঘুম দেয়া শুরু। অবশ্য সৌমেন যেখানেই যায় না কেন বাসে উঠলেই সে ঘুম দেবে। সে ৩০ মিনিটের যাত্রা হোক আর হোক ঘন্টা পাঁচ। বাস চলছে তার নিয়ম মত। আমারো চোখটা বুঝে আসছিল। বাসটা এসে যাত্রাবিরতী দিলো। নেমে হালকা খাওয়া খেয়ে নিলাম আমরা। প্রায় ২০ মিনিটের মত যাত্রাবিরতি। আবার যাত্রা শুরু। সন্ধ্যা শেষে রাতের নিস্তব্ধতা। শীতের রাত, কুয়াশার চাঁদর মোড়ানো একের পর এক ছোট ছোট শহরকে পারি দিয়ে সিলেটের পথে। রাত তখন ১০.৩০ বাস এসে থামলো সিলেটের কদমতলী বাস স্ট্যান্ডে। আগের থেকেই আমাদের হোটেল বুক করা ছিল।ভ্রমণ সঙ্গী হিসেবে লোকাল একটি সংস্থা ছিল। তারাই হোটেল বুক সহ আনুষাঙ্গিক বিষয় গুলো দেখছিল। আমরা আমাদের চাহিদাটা বলে দিয়েছিলাম। নেমেই দেখি ভ্রমণ সংস্থাটির উষ্ণ অভ্যর্থনা। গাড়িতে করে ওরা হোটেলে নিয়ে এলো। ক্লান্তি এখন দেহ জুড়ে। তাই দ্রুত হোটেলে চেকইন করে রুমে চলে আসি আমরা। প্রথম দিনের রাতের খাবার হোটেলেই করে নিলাম আমরা। আর পরের দিনের পরিকল্পনা করে নিলাম।ঠিক হলো খুব সকালে উঠেই যাবো বিছানাকান্দি তে এরপর যাবো রাতার গুল আর শহরের এদিক সেদিক। রাতটায় ভালোই নিদ্রা যাপন হলো। গভীর রাতের সিলেট কে বড় মায়াবী শহর মনে হলো। এই সিলেটেরই সন্তান বাউল শাহ আব্দুল করিম,হাসন রাজা,বৈষ্ণব সাধক রাধারমন দত্ত সহ অনেকেই।

বেশ সকালেই ডেকে দেয়া হলো আমাদের। আগেই আমরা জেনে নিয়েছিলাম আশপাশে বিষয় গুলো নিয়ে। নৈঋতা ভোজনরসিক তাই ও আগে থেকেই জেনে নিয়েছিল সিলেটের প্রসিদ্ধ পাঁচভাই,পানসী রেস্টুরেন্টের কথা। ভাবলাম সকাল বেলার খাবারটা পাঁচ ভাইয়েই করে নেবো। ভ্রমন সংঙ্গীর গাড়ির চালক টিও পাঁচ ভাইয়ের কথা বলে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তো পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্টে যাওয়া হলো। বেশ সকাল তখন। কিন্তু কি ভিড়। মনেহলো এখানে আসা বেশির ভাগ লোকই সিলেট ঘুরতে এসেছেন। নানা ভাষার সংমিশ্রণে অন্য রকম পরিবেশ। সৌমেন আর নৈঋতাই খাওয়ার অর্ডার দিল। চিকেন গ্রিল আর নান। কি স্বাদ। দ্রুত খেয়ে আমরা বিছানাকান্দির পথে রওনা দিলাম। শুরুতে দারুণ এক শহীদ মিনার দেখলাম নগরীর চৌহাট্টায়। মনেহলো পাহাড়ের মধ্যে শহীদ মিনারটি দাড়িয়ে আছে। চৌহাট্টা পাড়ি দিয়ে আমরা চা বাগানের ভিতর হয়ে বিছানাকান্দির পথে। যাওয়ার পথে একবার নয় দু- দুবার প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। ঘুমাতুর সৌমেন আজ এই সৌন্দর্যে আর ঘুমাতে পারে নি। আমরা নামলাম মালনিছড়া চা বাগানে। বলতে গেলে ব্রিটিশ পিরিয়ডে বাগানের সৃষ্টি। চা শ্রমিকরা কি সুন্দর শিল্পী নিপুনতায় চা তুলছে। কেমন একটা আর্ট আছে। আমরা চাইলাম ছবি তুলতে কিন্তু ওনারা ছবি তুলতে আগ্রহী নন। তারা কাজেই ব্যস্ত। কেউ কেউ দেখলাম সকালের জলযোগে ব্যস্ত। লাল আটার রুটি আর কি একটা ভর্তা খাচ্ছিল ওনারা। ভোজন রসিক নৈঋতা ভর্তার খোঁজ নিয়েই নিল। কচি চা পাতা,আলু, কাচাঁ বাদাম শুকনো মরিচ আর পেয়াঁজ দিয়ে কি দারুন একটা ভর্তা করেছে। অল্প করে চেখে নিলাম আমরা সবাই। টুকটাক ছবি তুলে বিছানা কান্দির পথে। যাওয়ার পথে হঠাৎ পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ শুনে গাড়ি থামাতেই হলো। গাড়ি চালক জানালো এটা সালুটিকর পাখি বাগান। এয়ারপোর্টের বেশ কাছেই। শত শত পাখি নিরাপদে বসে আছে। সবুজ গাছ পুরো সাদা হয়ে আছে পাখিতে। পাখি বাগানের বাসায় গিয়ে হরিনেরও দেখা পেলাম সাথে বানর ও। বাড়ির মালিক সৌখিন ভাবে এগুলো পালন করছেন। দারুণ লাগলো তার এ পাখি বাগান। আবার রওনা দিলাম। যত সামনে যাচ্ছি ততোই মুগ্ধ হচ্ছি প্রকৃতির সৌন্দর্যে। আঁকাবাকা পথ পাড়ি দিয়ে আমরা পৌছালাম হাঁদার পাড়। জানলাম কিছুদুর এগিয়ে গিয়ে আমাদের নৌকায় চড়তে হবে। নৌকা ভাড়া করে পৌঁছাতে হবে বিছানাকান্দি তে। গাড়ি চালকই নৌকা ঠিক করে দিলেন। প্রচুর পর্যটক এসেছে দেখলাম। আমরা নৌকায় উঠলাম। আমি একটু জল এবং নৌকা ভয় পাই বরাবরের মতোই। তবুও এই ভয়কে জয় করতেই রওনা দিলাম।প্রকৃতির রাজকন্যা বিছানাকান্দির দিকে নৌকা যতই এগোতে থাকছে, ততই চারপাশের সৌন্দর্যটা যেন উপচে পড়ছে আরো। মুগ্ধতা ততটাই বেড়ে যাচ্ছে। নৈঋতা তো ছবি তুলতে তুলতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। অভাবনীয় সৌন্দর্য আসার পথের ক্লান্তি দূর করে দিল। এ মুহূর্তগুলো পুরো ভ্রমণটাকে আরো স্মরণীয় করে রাখলো। একটু দূরের দুই পাশে মেঘে ঢাকা মেঘালয় পাহাড় যেন স্বাগত জানালো আমাদের। অবাক বিস্ময়ে বিছানাকান্দির রূপ দেখতে দেখতে এগোতে থাকি মূল স্পটের দিকে। নৌকা গিয়ে থামলো। কিছুটা পরই মূল স্পট।এবার জলকেলিতে মেতে ওঠার পালা। সৌমেন,নৈঋতার আর তর সইছিলো না।

বিছানাকান্দিতে রয়েছে ছোট-বড় অগণিত পাথরের সমারোহ। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অজস্র পাথর, দেখে যেন মনে হয় পুরো এলাকাটাই পাথরের বিছানা। আপনি যদি যান তাহলে পিয়াইন নদীর অগণিত পাথরের মাঝে আপনাকে হাঁটতে হবে সাবধানে পা ফেলে। একটু অসাবধানতার ফলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। পানির গভীরতা কম হলেও পাথরের মাঝে আপনার ভ্রমণকে করবে আরো রোমাঞ্চিত। একটু পরপর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সতর্কবাণী আপনাকে এনে দেবে আরো থ্রিলার। জলপাথরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজের একটা ছবি হলেও ফ্রেমবন্দি করে রাখতে ব্যস্ত হবেন। ওপরে নীল আকাশ ঠিকরে পড়েছে জলে। জল হয়েছে নীলাভ। ডানে-বাঁয়ে সামনে মেঘালয়ের উঁচু পাহাড়। পাহাড়ে হেলান দিয়ে সাদা মেঘ। মাঝে ঝরনার বর্ষণধারা। দৃষ্টির শেষ সীমানা পর্যন্ত শুধু পাথর আর পাহাড়। এ দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলানো যে বড় কঠিন! দীর্ঘ সময় জলপাথরের বিছানায় শুয়ে-বসে স্নান করার পর একসময় বুঝতে পারবেন, এবার ফিরতে হবে। আমাদের আসলে তখন বেশ ক্ষুধা ও লেগেছিল। ওই জায়গায়ই কিছু দোকান আছে খাবার। ওতেই ভরসা করা। সৌমেন,নৈঋতা টেবিলে খাবার আসার সাথে সাথে খাওয়া শুরু করলো। এতোই পেটে ক্ষিধে ছিলো সবকিছুই অমৃত মনে হচ্ছিল। খাওয়ার মান মোটামুটি এতো ভাল ও না আবার খারাপ ও না বাটা মসলায় রান্না করা তাই সাবেকী স্বাদ আছে একটা। খেয়ে এখন টুকটাক বাজার করলাম। এগুলো আমাদের ওখানেই পাওয়া যায় তবুও স্মৃতি আর কি। চা পাতা নিয়ে নিলাম। এবার আস্তে আস্তে রওনা হওয়ার পালা। এখন কেবল মন খারাপের পালা। যখন ফিরে আসছি, তখন পেছন থেকে সীমান্তের দিগন্ত ছোঁয়া মেঘালয় পাহাড় হাতছানি দিয়ে ডাকছে আর বলছে, আরো কিছুক্ষণ থেকে যাও। এখানকার নয়নাভিরাম প্রকৃতি কাউকে নিরাশ করবে না ।

আমরা এবার রওনা দিলাম রাতারগুলের দিকে। যাওয়ার পথে যা জানলাম রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট (Ratargul Swamp Forest)। এটি সিলেট জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। রাতারগুল বনটি প্রায় ৩০,৩২৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এই বিস্তৃর্ণ এলাকার ৫০৪ একর জায়গায় রয়েছে বন আর বাকি জায়গা ছোট বড় জলাশয়ে পূর্ণ। তবে বর্ষায় পুরো এলাকাটিকেই দেখতে একই রকম মনে হয়। রাতারগুল ‘সিলেটের সুন্দরবন’ নামে খ্যাত। এই রাতারগুল জলাবন বছরে চার থেকে পাঁচ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকা। তখন জলে ডুবে থাকা বনের গাছগুলো দেখতে সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমায়। অনেক পর্যটক রাতারগুলকে বাংলাদেশের আমাজন বলেও ডাকেন। বর্ষায় গাছের ডালে দেখা মিলে নানান প্রজাতির পাখি আবার তখন কিছু বন্যপ্রাণীও আশ্রয় নেয় গাছের ডালে। এছাড়াও শীতকালে এখানকার জলাশয়ে বসে হাজারো অতিথি পাখির মেলা। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর (বর্ষার শেষের দিকে) পর্যন্ত রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগ রাতারগুল বনের ৫০৪ একর জায়গাকে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে।

রাতারগুল একটি প্রাকৃতিক বন, স্থানীয় বন বিভাগ এখানে হিজল, বরুণ, করচ সহ বেশ কিছু গাছ রোপণ করেন। এছাড়াও এখানে চোখে পড়ে কদম, জালিবেত, অর্জুনসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির জলসহিষ্ণু গাছপালা।
রাতারগুল একটি প্রাকৃতিক বন। এরপরেও বন বিভাগ হিজল, বরুণ, করচ আর মুতা-সহ কিছু জলবান্ধবজাতের গাছ লাগিয়ে দেয় এ বনে। এছাড়াও রাতারগুলের গাছপালার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— কদম, জালিবেত, অর্জুনসহ জলসহিষ্ণু প্রায় ২৫ প্রজাতির গাছপালা।সিলেটের শীতলপাটি তৈরির মূল উপাদান মুতার বড় অংশ এই বন থেকেই আসে। বাংলাদেশ বন বিভাগ ১৯৭৩ সালে এ বনের ৫শ’ ৪ একর এলাকাকে বন্যপ্রাণীর জন্য অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে।এখানে আছে নানান প্রজাতির পাখি। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— মাছরাঙা, বিভিন্ন প্রজাতির বক, ঘুঘু, ফিঙে, বালিহাঁস, পানকৌড়ি ইত্যাদি।বন্যপ্রাণীর মধ্যে আছে— বানর, উদবিড়াল, কাঠবেড়ালি, মেছোবাঘ ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রজাতির গুঁইসাপ ও নানান ধরনের সাপের অভায়শ্রম এই বন।

আমরা গাড়ি হতে নেমেই মিনিট তিন হেঁটেই ঘাটে পৌছালাম। আবার নৌকায় করে যেতে হবে মূল জায়গায়। নৌকা আগের থেকেই ঠিক করা ছিল। তাই সমস্যা হয়নি। এখানেও ভাল পর্যটক আছে। আস্তে আস্তে আমরা বনের ভিতর ঢুকতে থাকি। যত ঢুকছি ততোই প্রকৃতির সৌন্দর্যে আমরা অভিভূত হচ্ছি।যতই গহীনে যাচ্ছি ততই গাছের ঘনত্ব বাড়তে থাকছে। অনেক জায়গাতেই সূর্যের আলো পৌঁছায় না। দুই-একদিন বৃষ্টি না হলে পানি এত বেশি স্বচ্ছ হচ্ছে যে, বনের সবুজ প্রতিবিম্বকে মনে হয় বনের নিচে আরেকটি বন। জানলাম শীতের শুরুতেই আনাগোনা শুরু হয় অতিথি পাখির। বনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া লেকে চলে পাখির ‘ডুবো খেলা’। বনজুড়ে চড়ে বেড়ায় নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী। হাওর আর নদী বেষ্টিত অপূর্ব সুন্দর বনের দক্ষিণ পাশে সবুজের চাদরে আচ্ছাদিত জালি ও মূর্তা বেত বাগান। এর পেছনেই মাথা উঁচু করে আছে সারি সারি জারুল-হিজল-কড়চ। বনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া লেকগুলো আলাদা সৌন্দর্য এনে দিয়েছে জলার বনটিকে।বড়ই অদ্ভুত এই জলের রাজ্য। কোনো গাছের হাঁটু পর্যন্ত ডুবে আছে পানিতে। একটু ছোট যেগুলো, সেগুলো আবার শরীরের অর্ধেকই ডুবিয়ে আছে জলে। কোথাও চোখে পড়বে মাছ ধরার জাল পেতেছে জেলেরা। ঘন হয়ে জন্মানো গাছপালার কারণে কেমন অন্ধকার লাগবে পুরো বনটা। মাঝেমধ্যেই গাছের ডালপালা আটকে দিবে পথ। হাত দিয়ে ওগুলো সরিয়ে তৈরি করতে হবে পথ। চলতে হবে খুব সাবধানে। কারণ রাতারগুল হচ্ছে সাপের আখড়া। বর্ষায় পানি বাড়ায় সাপেরা ঠাঁই নেয় গাছের ওপর।হাওরের স্বচ্ছ পানির নিচে বনগুলো দৃশ্যমান থাকায় বর্ষাকালে অনেক পর্যটকের সমাগম ঘটে এখানে। আবার শীত মৌসুমে ভিন্নরূপ ধারণ করে এ বন। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে জেগে ওঠে মূর্তা ও জালি বেতের বাগান। সে সৌন্দর্য আবার আবার অন্য রকম! বন এভাবে জলে ডুবে থাকে বছরে চার থেকে সাত মাস। বর্ষা কাটলেই দেখা যাবে অন্য চেহারা। তখন বনের ভেতরের ছোট নালাগুলো পরিণত হবে পায়ে চলা পথে। সেই পথ দিয়ে হেঁটে অনায়াসে ঘুরে বেড়ানো যায়। তো এখনই করে ফেলুন রাতারগুল ঘুরে যাওয়ার প্ল্যান। বোনাস সৌন্দর্য হিসেবে পাবেন গোয়াইন নদী দিয়ে রাতারগুল যাওয়ার অসাধারন সুন্দর পথ, বিশেষ করে বর্ষায়। নদীর চারপাশের দৃশ্যের সঙ্গে উপরি হিসেবে দেখবেন দূরে ভারতের উঁচু উঁচু সব পাহাড়। বনের মধ্যে ওয়াচ টাওয়ারে উঠলাম পুরো বনটাকে দেখার জন্য। একটু সাবধানতা অবলম্বন করে উঠতে হবে। সূর্যাটা মিনিট ত্রিশের মধ্যে ডুবে যাবে। তাই নৌকার মাঝির ব্যস্ততার জন্য ফেরার জন্য রওনা হলাম। ঘাটে আসতে না আসতেই আযানের ধ্বনি শুনলাম। বেশ ক্লান্ত সবাই। ক্ষুধা ও লেগেছে সবার। তাই শহর আর দেখা হলো না। হোটেলের পথেই আমরা।

যাবেন যেভাবে – ঢাকা থেকে সিলেটে আপনি ট্রেন,বাস কিংবা বিমানে খুব সহজে যেতে পারবেন। ট্রেন ঢাকা হতে প্রতিদিন চারটি করে ছাড়ে। খুব সকালে ছাড়ে পারাবত এরপর ক্রমান্বয়ে দুপুরে জয়ন্তিকা, বিকালে কালনী এবং রাতে উপবন। মোটামুটি ট্রেনে ৭ ঘন্টার মত লাগে পৌঁছাতে সিলেটে। তবে রাতের ট্রেনে যাওয়াটা ভাল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সহ বিভিন্ন শ্রেনী ভেদে ট্রেনের সর্বচ্চো ভাড়া বাংলাদেশী টাকায় ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ বিমান,ইউ এস বাংলা,নভো এয়ার এই তিনটি বিমান প্রতিদিনই দুটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। খরচ ২৫০০-৩৫০০ এর মধ্যে। আর ঢাকা থেকে সিলেটের বাসা পাওয়া যাবে প্রায় পনের মিনিট পরপর। এসি- ননএসি দুই ধরনেরই বাস পাওয়া যাবে। এসি বাস পাওয়া যাবে গ্রীনলাইন,এনা এবং লন্ডন এক্সপ্রেস এর বাস গুলোতে। ভাড়া এসি বাসের ১২০০-১৫০০ টাকা। সিলেট পৌছাতে ৬-৭ ঘন্টা লাগবে। এছাড়া ননএসি বাস ৫০০-৬৫০ টাকার মধ্যে ভাড়া হবে। আমরা অবশ্য সিলেট গিয়েছি গ্রীণলাইনের এসি বাস করে।
সিলেট থেকে বিছানাকান্দী, রাতার গুল স্বাচ্ছন্দ্যে যেতে মাইক্রোবাস ভাড়া করতে পারেন যা আমরা করেছিলাম ভাড়া সর্বচ্চো ৩৫০০ হতে ৪০০০ টাকা রাখবে। এছাড়া সিএনজি করেও যেতে পারেন ভাড়া ১০০০ হতে ১৫০০ টাকার মধ্যে হবে।

থাকবেন কোথায়,খাবেন কোথায় – থাকার জন্য সিলেট অনেক হোটেল আছে। একেক হোটেল একেক মানের।খুব বেশি ভাল হোটেল হলে ভাল টাকা রাখবে হোটেল ভাড়া। তাছাড়া প্রত্যেক হোটেলেই মোটামুটি রেস্টুরেন্ট আছে। আমরা ছিলাম শহরের জিন্দাবাজারস্থ হোটেল গোল্ডেন সিটি তে। বলতে গেলে শহরের প্রাণকেন্দ্রে। হোটেলে নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে। এর আশেপাশেই আছে সিলেটের প্রসিদ্ধ পাঁচ ভাই,পানসী,ভোজন বাড়ি রেস্টুরেন্ট। এছাড়াও নানা হোটেল রেস্তোরাঁয় ভরা সিলেট। তবে পাঁচভাই, পানসী, ভোজনবাড়িতে অতি অল্প খরচে নানা রকম খাবার খেতে পারবেন।

ভ্রমণ বিষয়ে সহযোগিতা নিতে পারেন-
গন্তব্য +৮৮ ০১৮১৯৫৬০৮৬০

– সুকান্ত গুপ্ত



শেয়ার করুন
Brush

আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ