জয়ন্তীতে কয়েকদিন


উত্তরবঙ্গের সৌন্দর্য নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। যাদের পায়ের তলায় সর্ষে তাদের কম বেশী সবারই উত্তরবঙ্গ ঘোরা। আমারো সেরম কিছুটা ঘোরা থাকলেও বক্সা, জয়ন্তী যাওয়ার সুযোগ হয়নি আগে।আগে থেকে প্ল্যান করে অক্টোবরে বেরিয়ে পড়লাম জয়ন্তীর উদ্দেশ্য।

জয়ন্তী উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার অন্তর্গত একটি গ্রাম যেটি বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। জয়ন্তী নদীর ধারে গড়ে ওঠা এই গ্রাম ভুটান পাহাড়ের সাথে একটি প্রাকৃতিক সীমানা তৈরী করেছে।নদী, পাহাড় ও জঙ্গলে পরিপূর্ণ ‘জয়ন্তী’ বাঙালি তথা সমস্ত পর্যটকদের কাছে এক অতি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র।

নিউ আলিপুরদুয়ার থেকে ঘন্টা খানেক এর পথ জয়ন্তী। আগে থেকে বুকিং ছিল রিসর্টে,নদী-পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এই রিসর্ট থেকে অসাধারণ ভিউ উপভোগ করা যায়। প্রথম দিন ক্লান্ত থাকার দরুন বেশী ঘোরাঘুরি হয়নি তবে বিকালের মধ্যেই জয়ন্তী নদীর স্রোতের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল।

পরেরদিন থেকে ভরপুর উত্তেজনা নিয়ে শুরু করলাম অ্যাডভেঞ্চার। প্রথমে বলে রাখা ভালো যে জয়ন্তীর জঙ্গলে ঘুরতে গেলে সরকারের অনুমতি নিতে হয় এবং permit মাথাপিছু ১০০/- যার validity তিনদিন।

১)পুকরি লেক:

প্রথম দর্শনীয় স্থান ছিল পুকরি লেক। সময় তখন ভোর ৬টা।জিপ ছুটে চলেছে সবুজ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে, চারিদিকে ধ্বনিত হচ্ছে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, মাঝে মাঝে হরিণ ছুটে যাচ্ছে এদিক ওদিক, পাতার ফাঁকে ফাঁকে মাকড়সারা জাল বুনতে ব্যস্ত, দুনিয়ার কোনো ব্যাপারে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই, অর্কিডের কুঁড়ি ঊঁকি দিচ্ছে মাঝখান থেকে।

সবমিলিয়ে এক অসাধারণ রোমাঞ্চকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে প্রকৃতি। মিনিট পনেরো jeep Safari-র পর ৩.৫ কিমি ট্রেক করে পৌঁছতে হবে গন্তব্যে।চড়াই-উৎড়াই জঙ্গলপথে অ্যাডভেঞ্চার করাটা বেশ আলাদা অনুভুতি এনে দেয় বিশেষত যখন সদ্য হয়ে যাওয়া বৃষ্টি বনান্তকে আরো সবুজ করে দেয়।দুর থেকে বার্কিং ডিয়ারের আওয়াজ আতঙ্ক সৃষ্টি করে। অবশেষে পুকরি লেকে এলাম। গাইডের নির্দেশ অনুযায়ী মুড়ি এনেছিলাম যা লেকের মাগুর মাছ আর কচ্ছপদের খাইয়ে খুব মজা পেলাম। স্থানীয় অঞ্চলের মানুষ এই লেকের জল ও মাছেদের পুজো করেন। পাশে পুজোর বেদী দেখলাম যেখানে বুদ্ধপূর্ণিমা ও মাঘমাসে যথাক্রমে বৌদ্ধ ও বনদেবীর পুজো উপলক্ষে উৎসব পালন করা হয়।

২)TGN-I Watch Tower:

পুকরি লেক থেকে কিছু দুরে এই ওয়াচ টাওয়ার আছে, একটি কৃত্রিম জলাশয় ও সল্টপিট রয়েছে যেখানে বন্যজন্তুরা জল খেতে আসে।

৩)বক্সা কোর সাফারি:

বিকেল তিনটে তখন, জিপসি করে রওনা দিলাম কোর সাফারির উদ্দেশ্য। মোট ৫ টা করে জিপ একসাথে ঢোকার পারমিশন পাওয়া যায়। জঙ্গলে ঢুকেই হরিণের দর্শন পাওয়া গেল। ময়ূর ও কিছু রঙিন পাখিও দেখলাম‌। এরপর যে ঘটনা গায়ে কাঁটা দেয় সেটা হল চিতাবাঘের পায়ের ছাপ, শুধু তাই নয়, কিছু দূরে চিতাবাঘের শিকারের (বানর) আর্তনাদ গায়ে শিহরন জাগিয়ে তোলে।ঘন্টা দুই core safari করার অনুমতি দেয়। মেঘলা weather আর সাথে হঠাৎ হঠাৎ মেঘের গর্জন পরিবেশকে আরো ভয়ঙ্কর করে তুলেছিল। জঙ্গলের রূপ যে এত মোহময়ী হয় তা আগে বুঝিনি,সত্যিই সম্মোহিত হয়ে পড়েছিলাম ঐ দুটো ঘন্টা।

৪)বক্সা ফোর্ট:

আলিপুরদুয়ার থেকে ৩০কিমি দুরে অবস্থিত এই ফোর্ট। শোনা যায় যে পূর্বে ভুটান রাজা বক্সা ফোর্ট-এর মাধ্যমে ভারতে আসতেন।

এছাড়াও চুনিয়া টাওয়ার ও মহাকাল হ্রদ দর্শনীয় স্থান হিসেবে উল্লেখযোগ্য।

কখন যাবেন-

অক্টোবর থেকে মার্চ হল উপযুক্ত সময়। তবে বর্ষায় জঙ্গল উপভোগ করতে হলে জুন মাসে যেতে হবে।

কোথায় থাকবেন-

জয়ন্তী নদীর তীরে অনেক হোমস্টে রয়েছে। উল্লেখযোগ্য- বনান্তে রিসর্ট, এখানে ঘরোয়া, বাঙালি খাবারের সুবন্দোবস্ত আছে। যোগাযোগ- ৯৬০৯৯৩১৮৫৭ (মানব বক্সী)

Govt. Forest Bungalow তে থাকতে গেলে আগে থেকে বুকিং করতে হবে।

কিভাবে যাবেন-
হাওড়া/শিয়ালদহ থেকে নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশন ট্রেনে ও তারপর গাড়ি করে এক ঘন্টা‌। বিমানপথে যেতে হলে বাগডোগরা নেমে তারপর সড়কপথে ঘন্টা দুই তিন লাগে জয়ন্তী পৌঁছতে।

কলমে- বিদিতা চ্যাটার্জী



শেয়ার করুন
Brush

আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ