আপনার ভাষা নির্বাচন করুন
হাওড়া-যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে সকাল ৮টা নাগাদ পলাসা স্টেশনে পৌঁছালাম। দুজন বন্ধু শেষ মুহূর্তে টিকিট ক্যান্সেল করে, তাই আমার সঙ্গী একমাত্র অতনুদা। বাইরে বেরিয়ে চটজলদি হালকা ব্রেকফাস্ট করে একটা অটো ভাড়া করে বেরিয়ে পড়লাম এক অজানার সন্ধানে। শহর পেরিয়ে কিছুটা এগোতেই রাস্তার দুধারে ছোট ছোট পাহাড় , ধানক্ষেত আর তার ফাঁকে ছোট ছোট গ্রাম। যতদুর চোখ যায় শুধু সবুজের বাহার যা পথের ক্লান্তিকে ভুলিয়ে দেবে। অন্ধ্রের সীমানা ছাড়িয়ে ঢুকে পড়লাম ওড়িশায়। রাস্তার অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তবে শেষ ৫ কিমি রাস্তা জাস্ট অসাধারন। দুদিকে শুধু কাজু গাছের জঙ্গল আর তার মধ্য দিয়ে কালো পিচের রাস্তা। দুঘন্টা পরে ওড়িশা ট্যুরিজমের একটা সাইনবোর্ড দেখতে পেলাম…..গন্দাহাতি ওয়াটারফলস্ ২ কিমি। আরো কিছুটা এগিয়ে মূল প্রবেশ পথ নজরে পড়ল।
চারপাশে বুনো লতা, ফল-ফুল আর নানান গাছ গাছালির জঙ্গল। ফুলের ওপর রঙবাহারি প্রজাপতির ঝাঁক। পাখির কিচির মিচির শব্দে মাতোয়ারা চারিদিক। প্রবেশ পথের বাঁধানো রাস্তা দিয়ে হেঁটে চললাম। রাস্তার দুপাশে বসার জন্য বেঞ্চ করা আছে। কিছুটা এগোতেই একটা সোঁসোঁ শব্দ কানে আসে। এবার জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে চোখে পড়ল অপূর্ব এক জলপ্রপাতের রূপ। অনেক দূর থেকেই সগর্জনে সে নিজের অস্তিত্ব জাহির করে চলেছে। অবশেষে আরো কিছুটা যাওয়ার পর চোখের সামনে সম্পূর্ণ রূপে ধরা দিল গন্দাহাতি ওয়াটারফলস্। প্রায় ৭০ ফুট উঁচু থেকে মহেন্দ্র তনয়া নদীর সফেদ জলরাশি পাথরে সশব্দে আছড়ে পড়ছে, সেখান থেকে তৈরি জলবিন্দুগুলো একটা কুয়াশার মতো আস্তরন তৈরী করছে। কিছু ছেলেরা ঝর্ণার জলে স্নান করছে। ওড়িশা পর্যটন দপ্তর জায়গাটিকে পার্কের আদলে সাজিয়ে তুলেছে। তাই বাচ্চা থেকে বড়ো সবার খুব পছন্দের এ জায়গা। মূলতঃ শীতকালে এখানে জনসমাগম বেশি হয়। অন্ধ্র ও ওড়িশার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ঘুরতে আসে। ওড়িশার গজপতি জেলার পার্লাখেমুন্ডি ফরেস্ট রেঞ্জের অন্তর্গত এই ট্যুরিস্ট স্পটে একসময় হাতিদের অবাধ বিচরন ক্ষেত্র ছিল, তাই লোকমুখে জায়গাটির নাম হয় “গন্দাহাতি”। আগস্টের শেষ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এখানে যাওয়ার আদর্শ সময়।
★★ কাছাকাছি আর কি কি দেখবেন
◆ গজপতি প্যালেস (বৃন্দাবন প্যালেস) – গন্দাহাতি থেকে ৩৫ কিমি (তখন বন্ধ ছিল তাই আমার যাওয়া হয় নি)
◆ আক্কুপল্লী বীচ (শিবসাগর বীচ) – পলাসা স্টেশন থেকে ১০ কিমি (স্বচ্ছ নীল জলের নির্জন ও পরিচ্ছন্ন সমুদ্র সৈকত-সারি সারি নারকেল গাছ-জেলে নৌকার ভেসে বেড়ানো)
◆ বারুভা বীচ – পলাসা স্টেশন থেকে ৩৫ কিমি
★★ কেনাকাটা :–
এখানে প্রচুর কাজুর চাষ হয়। কাজু প্রসেসিং-এর কারখানাও অনেক। বাসস্ট্যান্ডের আশেপাশে অনেক কাজুর দোকান আছে। কোলকাতা বা দীঘার থেকে কম দামে ভালো মানের কাজু কিনতে পারেন।
সাঁতরাগাছি থেকে প্রতি মঙ্গলবার শালিমার-বিশাখাপত্তনম এক্সপ্রেস ১৮.২৩ মিনিটে ছেড়ে পরেরদিন ০৫.০৮এ পলাসা পৌঁছায়।
যারা অন্যদিনে যাবেন, তারা হাওড়া থেকে ২০.৩৫এর যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে পরের দিন ০৭.১৮তে পলাসা স্টেশনে নেমে দরদাম করে অটো/গাড়ি ভাড়া করে ৩২ কিমি দূরে গন্দাহাতি ফলস্ ঘুরে আসুন। ভাড়া ৫০০-৭০০ টাকা। আরো কিছু সাইট সিয়িং যোগ করলে ভাড়া বাড়বে। । স্টেশনের বাইরে অজস্র অটো/গাড়ি পেয়ে যাবেন।
– পার্থ দে –