কাজিরাঙ্গার মা ও ছা


ওর নাম জয়। জয় বড্ড মা-ন্যাওটা! একেবারে চোখের আড়াল হতে দেয় না মা কে। কিন্তু মা রুক্মিণীর কি আর ছা নিয়ে আদিখ্যেতা করবার সময় আছে? রোজ কাকভোরে পিঠবোঝাই করে ভ্রমণপিপাসু অতিথিদের নিয়ে তাকে যেতে হয় জঙ্গল পরিভ্রমণে।

কাজিরাঙ্গার জঙ্গল। পিঠের ওপরে দুপেয়ে অতিথিদের চাপিয়ে নিয়ে চলতে থাকে রুক্মিণী। পেছন পেছন জয়ও চলে মায়ের আঁচল ধরে…. ওহো! আঁচল তো নয়! ওটা তো লেজ।.. নিজের ছোট্ট শুঁড়টা দিয়ে বার বার মায়ের লেজ আঁকড়ে ধরে জয়। রুক্মিণী এগিয়ে চলে। তার পিঠের ওপরে বসে থাকা ভ্রমণকারী মানুষেরা ভোরের নরম আলোমাখানো স্বচ্ছ, দূষণমুক্ত আকাশের স্বাদ পায়। চারপাশের স্নিগ্ধ সবুজকে মিশিয়ে নেয় বুকভরা নিশ্বাসের মধ্যে। এপাশ ওপাশ থেকে পাখীদের কুয়াশাভেজা ডানা ঝাপটানোর শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। দু-চারটে নীলকন্ঠ পাখী একগাছের শুকনো ডাল থেকে উড়ে গিয়ে আর এক গাছের ডালে বসে বেশ ভালোমত নিরীক্ষণ করে নেয় বেড়াতে আসা অতিথিদেরকে। চোখের সামনে Rational Being দের দেখেও একটুও ঘাবড়ে না যাওয়া গন্ডার, হরিণ, বনমহিষরা অবাধে বিচরণ করে বেড়ায় চতুর্দিকে।

নিজের দায়িত্বপালনে কোনও ত্রুটি রাখেনা রুক্মিণী… আবার তার মধ্যে ছা টির প্রতিও কড়া নজরদারি বজায় রেখে চলে সে। জয় একটু পিছিয়ে পড়লেই রুক্মিণী তার গতি কমিয়ে দেয়। অবশেষে মাহুতের বকা খেয়ে মাথা দোলাতে দোলাতে ছুট্টে এসে আবার মায়ের পাশাপাশি চলতে শুরু করে জয়।

একবার মনে হলো- মায়ের পিঠের ওপরে মানুষগুলোকে বসে থাকতে দেখে কি হিংসা হচ্ছে ওর? রাগ হচ্ছে? আসলে রক্তের মধ্যে ঈর্ষা, দ্বন্দ্ব,রাগ, জটিলতা মেশানো এই আমরা- কেবলমাত্র নিজেদের মত করেই সবকিছু দেখতে চাই।… জয় হিংসা করতে যাবে কেন? ঈশ্বর যে এক পৃথিবী ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে রেখেছেন ওকে! কত বড় জগৎটা ওর! মাথার ওপরে মস্ত আকাশের আদর, বনভূমির হাল্কা-গাঢ় সবুজের আদর সারা গায়ে মেখে নিতে নিতে ও বড় হচ্ছে, সম্বৃদ্ধ হচ্ছে। ওর যে আর কিছু চাওয়ার বা পাওয়ার নেই…. শুধুমাত্র মায়ের সান্নিধ্যটুকু ছাড়া।

কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক
————————————————
কীভাবে যাবেন :
বিমানে কলকাতা থেকে যাবেন জোড়হাট। সেখান থেকে ১১২ কিলোমিটার দূরত্বে কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক। (ট্যাক্সিতে ২ ঘন্টা ৫০মিনিট লাগবে)

ট্রেনে যেতে হলে- হাওড়া থেকে কামরূপ এক্সপ্রেস অথবা নিউ তিনসুকিয়া এক্সপ্রেসে মরিয়ানি স্টেশনে নামতে হবে। মরিয়ানি থেকে ট্যাক্সি ধরে আনুমানিক ৩ ঘন্টা ২০মিনিটের সড়কপথ।

-নীলাঞ্জনা মল্লিক-

শেয়ার করুন
Brush

আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ